শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান:
সততার প্রতিমূর্তি
✍️ আনোয়ার হোসেন রনি,
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন নেতার সংখ্যা অতি সীমিত, যিনি রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে থেকেও ব্যক্তিগত জীবনে সততা, পরিমিততা এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই বিরল ব্যতিক্রম। তিনি শুধু দেশের স্বাধীনতা,স্থিতিশীলতা ও জনগণের কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেননি, বরং নিজের জীবনধারাতেও রেখেছেন নৈতিকতার অনন্য ছাপ।
প্রেস সচিব কাফি খানের স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে জিয়ার সেই সততার গল্প। রাষ্ট্রপতির পদে থেকেও তাঁর মাসিক বেতন ছিল মাত্র তিন-চার হাজার টাকা। এর মধ্য থেকে নিয়মিত ১৫০ টাকা তিনি রাষ্ট্রপতির রিলিফ ফান্ডে জমা দিতেন। বাকি সামান্য অর্থ দিয়েই সংসার চলত। এ শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং প্রমাণ যে প্রকৃত নেতার কাছে ক্ষমতা কখনো ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসের হাতিয়ার নয়—বরং জনগণের কল্যাণে এক অঙ্গীকার।
সরল খাদ্যাভ্যাস, সাধারণ জীবনযাপন
জিয়াউর রহমানের জীবনধারা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। প্রতিদিনের খাবারের টেবিলে থাকত একটিমাত্র তরকারি, ডাল ও সবজি। বড় অতিথি বা মন্ত্রী আসলেও বাড়তি আয়োজন করতে তিনি দেননি অনুমতি। সফরে গেলে ডিসিদের কাছে তাঁর নির্দেশ ছিল স্পষ্ট—একটি ভাজি, একটি ডাল আর একটি মাছ বা মাংস। অতিরিক্ত কিছু যেন না হয়।
তবে তাঁর একমাত্র দুর্বলতা ছিল মিষ্টির প্রতি। টেবিলে মিষ্টি থাকলে খুশি হতেন, না থাকলেও অভিমান করতেন না।ছোট্ট ঘটনার মধ্যেও সততার দৃষ্টান্ত জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো যখন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে পড়তেন, একদিন ছেঁড়া জুতো পায়ে স্কুলে যান। প্রিন্সিপাল জিজ্ঞেস করলে কোকো জানান, “বাবা বলেছেন, কয়েকদিন পরে কিনে দেবেন।” রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও নতুন জুতো কিনতে বিলম্ব—এ দৃশ্যই প্রমাণ করে পরিবারেও তিনি শিখিয়েছিলেন সংযম ও সাধারণতার পাঠ।
উপঢৌকন ব্যবস্থাপনায় নৈতিকতার অনন্য উদাহরণ
রাষ্ট্রপতি হিসেবে নানা উপহার পেতেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু কখনোই ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করেননি। সব উপহার পাঠাতেন বঙ্গভবনের তোষাখানায়। এমনকি তাঁর সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়াও সেসব ব্যবহার করতে পারেননি। তিনি নিজে ব্যবহার করতেন এক পুরনো ঘড়ি—যার দামও সামান্য। একবার জনসভায় হাত মেলাতে গিয়ে ঘড়ি হারালে দীর্ঘদিন সেই ছোট্ট জিনিসটির জন্য আফসোস করেছিলেন।
মানবিকতার প্রতিচ্ছবি জিয়াউর রহমানের মানবিকতা গ্রামীণ সফরগুলোতে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হতো। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিতেন, শিশুদের হাতে বই তুলে দিতেন, বৃদ্ধদের সঙ্গে গল্প করতেন, আহত-অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর কাছে রাষ্ট্রপতির পদ মানে ছিল মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে তাদের আপন করে নেওয়া।
নেতৃত্বে সততার দৃঢ়তা
অর্থ, পদ বা ক্ষমতা—কোনো কিছুই তাঁকে বিচ্যুত করতে পারেনি সততার পথ থেকে। তিনি কখনো অবৈধ সম্পদ অর্জন করেননি, কখনো বিলাসিতায় ভেসে যাননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল, নেতৃত্বের শক্তি আসে নৈতিকতা থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের কঠিন সময়েও তিনি সেই নৈতিকতার আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে গেছেন।
এক অম্লান প্রতিমূর্তি
প্রতিদিনের জীবন, খাবার, পোশাক, ব্যবহার—সবখানেই পরিমিততা ও নিয়ম ছিল জিয়ার জীবনের বৈশিষ্ট্য। তিনি প্রমাণ করেছিলেন, নেতৃত্ব মানে শুধু ক্ষমতার প্রদর্শন নয়, বরং সেই ক্ষমতাকে সততা ও মানবিকতার সাথে পরিচালনা করা।।আজও তাঁর জীবনকাহিনী আমাদের শেখায়—সত্যিকারের নেতা সেই, যিনি ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি সিদ্ধান্তে সততা, ন্যায় ও মানবিকতার মিশেল ঘটাতে পারেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন আমাদের সামনে এক শিক্ষা—সততা, সংযম ও নৈতিকতায় গড়ে ওঠা নেতৃত্বই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকে। তিনি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অধ্যায় নন, বরং এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তাঁর সরলতা, মানবিকতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়ক মানেই সেই ব্যক্তি, যিনি নিজেকে জনগণের সেবক ভাবতে পারেন এবং সর্বোপরি সততাকে জীবনের মূলমন্ত্র করে নিতে পারেন।#
Leave a Reply