আলোচিত খবর

মৃত ৬ দিন পর জীবিত দেখিয়ে কো‌টি টাকার ভু‌মি দখ‌লের চেষ্টা !

মৃত ৬ দিন পর জীবিত দেখিয়ে কো‌টি টাকার ভু‌মি দখ‌লের চেষ্টা !

সুনামগঞ্জ,প্রতি‌নিধি,
সুনামগঞ্জের ছাতকে মৃত ব্যক্তিকে ৬‌দিন পর জী‌বিত দে‌খি‌য়ে ভু‌মি ভূয়া জাল দলিল তৈ‌রি ক‌রে প্রায় কো‌টি টাকার ভু‌মি সম্প‌দি দখল ও আত্নসা‌তের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার দা‌বি‌তে আদালত সহবি‌ভিন্ন দপ্ত‌রের ধনা দি‌চ্ছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।

জানা যায়, উপজেলার হাতধনালী,পশ্চিম চৌচাক ও দিমকা মৌজায় প্রায় সা‌ড়ে তিন একর ভূমির রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন খুরমা দক্ষিন ইউনিয়নের হাতধনালী গ্রামের হাফিজ মাহমুদ আলী ওরফে হবিল আলী।
তার মৃত্যুকালে দুই পুত্র কালা মিয়া ও ময়না মিয়াকে রেখে যান। সেই হিসাবে কালা মিয়ার মৌরশী সম্পত্তির অর্ধেক অংশের মালিক ও দখলকার থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বাভাবিক অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। যার মৃত্যু নিবন্ধন নং- ২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪। কালা মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে আকলুছ মিয়াসহ অন্যান্য ছেলে মেয়েরা উত্তরাধিকারী সুত্রে মৌরসী সম্পত্তির তার পু‌ত্রের দখলে আছে।
অভিযোগ উঠেছে, আকলুছ মিয়ার বাবা কালা মিয়ার মৃত্যুর পর ময়না মিয়ার ছেলে কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও .শায়েস্তা মিয়ার নেতৃ‌ত্বে ভূমি জোর পূর্বক দখলের চেষ্টা করছেন।
এতে আকলুছ মিয়া নিরুপায় হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সালিশ বৈঠক ডাকলে প্রতিপক্ষ ভূমি খেকো চক্র তার ভূমি দলিল মূলে ক্রয় করেছেন তারা । এ ঘটনার পর আকলুছ মিয়া ছাতক সাব-রেজিষ্টার অফিসে ব‌্যাপক তল্লাশী চা‌লি‌য়ে এক‌টি দলিলের সন্ধান পায়। সহিমুহরি দলিল উত্তোলন করে দেখতে পায ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বাবা কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও মো.শায়েস্তা মিয়ায় এক‌টি জাল দলিল ক‌রেছে। তার বাবা মৃত ৬ দিন পর ‌কিভা‌বে এক‌টি দ‌লিল ছাতক অ‌ফি‌সে রে‌জিষ্টার হলো। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর দলিল নং-৪০৬১/২০১৮ ইং মৃত্যুর ৬ দিন পর এক‌টি দ‌লিল রে‌জিষ্টার ক‌রেন ছাতক রে‌জিষ্টার অ‌ফি‌সের দুনী‌তিবাজ সার রে‌জিষ্টার।

আকলুছ মিয়ার তার বাবা মৃত কালা মিয়ার নামে জাল দলিলের বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবগত করার পর এলাকাবাসী এক‌টি সালিশ বৈঠকের আয়োজন ক‌রেন।
এ সালিশ বৈঠকেই কবির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া, .শায়েস্তা মিয়াসহ এদের‌কে প্রশ্ন করার হ‌লে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এলাকাবাসী‌কে। প‌রে এঘটনায় নি‌য়ে স্থানীয় ভাবে নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার সালিশ বৈঠক অনুষ্টিত হলেও শেষ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।
এ ঘটনায় আকলুছ মিয়া বাদী হয়ে হাতধনালী গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে কবির আহমদ, ছাব্বির মিয়া, আঙ্গুর মিয়া,দেলোয়ার মিয়া,শায়েস্তা মিয়া, সম্রাট মিয়া, জিতু মিয়া, টেটিয়াচর গ্রামের মৃত. হাজী রশিদ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ ও গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের মৃত.সচিন্দ্র কুমার দাসের ছেলে সুনীল দাস (দলিল লিখক)সহ ৯ জনকে আসামী করে গত ২০১৯ সালে ১০ ডিসেম্বর সুনামগ‌ঞ্জের আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রিট আদালতের এক‌টি মামলা দা‌য়ের ক‌রেন। সি. আর মোং নং-৩৫২/২০২৯।

অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্টিট, আমল গ্রহনকারী আদালত, ছাতক জোন, সুনামগঞ্জ কতৃক স্মারক নং ১২২১০ মুলে থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে করেন। থানায় প্রাপ্তির পর ২০১৯ সালে ২৮ ডিসেম্বর তারিখে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন ছাতক থানার এসআই মহাদেব বাছাড়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ ক‌রেন, বিবাদীরা একে অপরের সহযোগীতায় প্রতারনা ক‌রে আস‌ছে। মামলার বাদী আকলুছ মিয়ার আনিত অভিযোগটি প্রাথমিকভা‌বে তদন্তে প্রমা‌নিত হ‌লে দ:বিঃ ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারার তা‌দের বিরু‌দ্ধে আনীত অপরাধ সত্য ব‌লে প্রমানিত হয় ।

গত ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর আকলুছ মিয়ার বাবা কালা মিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মৃত পর খুরমা দক্ষিন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাব মৃত্যু নিবন্ধন করেন যার নং- ২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪। সেই সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির ও দীপক রঞ্জন দাস সচিব ছিলেন।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির দায়িত্ব হস্তান্তর করার আগের দিন ইউপি সচিব দীপক রঞ্জন দাসের যোগসাজেসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাব মৃত্যু নিবন্ধন বাতিল না ক‌রে আরেক‌টি নতুন একটি মৃত্যু নিবন্ধন করেন তি‌নি। এতে কালা মিয়ার মৃত্যু ২‌টি সনদ র‌শি টানাটা‌নি হ‌চ্ছে। গ্রামবা‌সি জানান,কালা মিয়া ২০১৮ সালের ৩ ডি‌সেম্বর তার মৃত হয়।

এ মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী কবির আহমদ, ছাব্বির মিয়া ও দেলোয়ার মিয়া আত্মগোপনে রয়েছে। বাদী ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশষ্কা করছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।

গত ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে কালা মিয়া মৃত্যুবরণ করেন যার মৃত্যু নিবন্ধন নং- ২০১৯৯০১২৩৪২০০০২৪৪ তা বহাল রাখার জন্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান এর দারস্থ হন আকলুছ মিয়া। এর প্রেক্ষিতে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও সচিব দিপক রঞ্জন দাস।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ভূমি খেকো চক্রের ভয়ে সত্যতা পাওয়ার পরও সংশোধন করছেন না ব‌লে অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন বাদী । পরে ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আকলুছ মিয়া। তার অ‌ভি‌যো‌গের প‌রি‌পে‌ক্ষি‌তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন থানার এসআই গোলাম ফাত্তাহ মোরশেদ চৌধুরী।

এব‌্যাপা‌রের আত্মগোপনে থাকা মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী ছাব্বির মিয়া স‌ঙ্গে মোবাইল ফো‌নে যোগা‌যোগ কর‌লে তা‌দের বিরু‌দ্ধে এ অ‌নিয‌মের সংবাদ প্রকাশ করা হলে সংবাদকমীকে হত‌্যার হুম‌কি দি‌য়ে ব‌লে পাখির মত গুলি করে মে‌রে ফেলা হ‌বে সহপরিবার‌কে।

অপর আসামী শায়েস্তা মিয়া তার মোবাইল থে‌কে ফোন ক‌রে কল দি‌য়ে ব‌লেন বুঝে শুনে সংবাদ প্রকাশ কব‌বেন। এসব হুমকির ঘটনায় এ প্রতিনি‌ধি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ছাতক থানায় একটি জিডি নং- ৮৯৭, ১৫.০৮.২০২২ ইং দায়ের করা হয়।

এ ব‌্যাপারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির তার বিরু‌দ্ধে আনীত অ‌ভি‌যোগ‌টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে থানার ওসি মাহবুবুর রহমান এ ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন সংবাদকমী শামীম আহমদ তালুকদা‌রের থানায় এক‌টি জিডি দায়ের করেন। তদন্তপুবক আইনানুগত ব‌্যবস্থা নেয়া হবে।###

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!