ড্রেজার ডন সুজন আত্নগোপনে ছাতকে নদী থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার বালু লুটপাট
ছাতক প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জের নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে দেশের সম্ভাবনাময়ী প্রাকৃতিক সম্পদ মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে সুরমা, চেলা, মরা, চেলা,হাদা টিলা,সোনাই ও ধলাই ইছামতি,বনভুমি,খাল বিল ও নদীর পাড়, জলাশয় ও ইজারা বিহীন ৫ টি মৌজার বালু পাথর মহাল থেকে দিনে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার বালু লুটপাট হয়। ছোট বড় মিলে ৩০০ নৌকা এই মহাল থেকে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করেছে নদীর এলাকায় বড় বাল্কহেড বা কার্গোতে এনে বিক্রি করেছে দেশে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ফলে পরিবেশ, ও জনজীবনে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। বিনষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার বনভুমি আবাদি কৃষি জমি।
সুনামগঞ্জের দোয়ারবাজার, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জের উপজেলার হাজার কোটি টাকার হাদা টিলার বনভুমি, ফসলি জমি, পরিবেশ ও এলাকার জীব বৈচিত্র ধবংস করেছে অবৈধ ড্রেজার সিন্ডিকেট চত্রæ সুজন। এসব নদীর এলাকায় রাতে পাইপ বসিয়ে বোম্ ামেশিন যোগে বালু উত্তোলনে উচ্চ শব্দে ১০টি গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী জানান, সুজন মিয়া ধলাই ও পিয়াইন নদী একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে মেশিন লাগিয়ে চেলা ও সোনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। তবে যেখান থেকে লিজ নিয়েছে সেখানে বালু উত্তোলন না করে হাদার টিলা বনভুমি নদীর গ্রামে এসে বড় বড় মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অপরিকল্পিত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলনকারী মেশিনের উচ্চ শব্দে শিশু, রোগী ও গ্রামের মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। এসব নদী থেকে অবৈধ বালু পাথর ও ভিট মাটি উত্তোলনে গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগের যুবলীগ ছাত্রলীগ সেচ্ছাসেবক লীগ শ্রমিকলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ভুমি খেকো ও লুটেরাদের কারনে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বেশ কয়েকটি নদীর মানচিত্র ও মৌজার বনভুমি ও ফসলি জমি ধ্বংস হচ্ছে। ১৫বছরে প্রায় ৫শত কোটি টাকার বালু অবৈধ ভাবে উত্তোলন করে লুটপাট করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী লোকজন অভিযোগ করেন। এসব ঘটনায় ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম ইতিমধ্যেই সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, ছাতক উপজেলার ১নং ইসলামপুর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী অঞ্চলের রাজেন্দ্রপুর, সৈয়দাবাদ, বাহাদুরপুর ও ইসলামপুর মৌজা জুড়ে রয়েছে ৬হাজার ১শত ৪১.৯০ একর ফরেস্ট বিভাগের বনভুমি এবং পেকুয়া ও গুয়াপাগুয়া নামে রয়েছে বিশাল জলমহাল ভুমি। এসব এলাকায় সরকারি বনভুমিতে রয়েছে কয়েক লাখ মুর্তা বাগান ও বিভিন্ন জাতের গাছ যা পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে যুগান্তকারী ভুমিকা পালন করছেন হাদার টিলা।্এ টিলার মাটির নিচে রয়েছে হাজার কোটি টাকার লাল পাথর। স্থানীয় এলাকাবাসী পক্ষে এলাকার দায়ের কৃত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চটিবহর আমবাড়ি গ্রামের হাজী তৈমুছ আলীর ছেলে সুজন মিয়া ও তার ভাই সমসের আলী সহ অর্ধশতাধিক লোকজন নিয়ে সুজন নামে জলদস্যু লাঠিয়াল বাহিনী নদী এলাকায় গড়ে উঠেছে। এ বাহিনীর দিয়ে রাতে অন্ধকাওে চেলা,হাদার টিলা,সোনাই,ধলাই পিয়াইন নদী বালু মহাল ইজারার নামে ও পেকুয়া এবং গুয়াপাগুয়া জলমহাল সাবলীজের নামে রাজেন্দ্রপুর মৌজার চৈলতার ঢালা, সৈয়দাবাদ, বাহাদুরপুর ও ইসলামপুর মৌজার সরকারি ফরেস্ট বিভাগের বনভুমি ও জনসাধারনের ফসলি জমির তীরে এবং জামুরা এমদাদ নগর গ্রামের পাশে প্রতিদিন দুই শতাধিক বোমা মেশিন ও ড্রেজার ব্যবহার করে ৭০/৮০ ফুট গভীর হতে বালু মাটি উত্তোলন করে তিন শতাধিক ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। যা ২০১০ইং সালের মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। ২০২১ সালে পিয়ান নদী ও চেলা নদীতে বৈধ বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ছাতক নৌ-পুলিশ বাঁধা দিলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর লোকজন কয়েকজন নৌ-পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলায় চালায়। এ হামলায় নৌপুলিশের পুলিশসহ ৬জন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। এছাড়াও গত ২০২২-২৩ইং সালেও গোয়ালগাঁও, ইসলামপুর, জামুরা ও গনেশপুর গ্রামের পিয়াইন নদী ও চেলা নদীতে অবাধে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে তান্ডব চালালে ইউনিয়নবাসী তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে থানা পুলিশ কয়েকটি নৌকা ও ড্রেজার মেশিস আটক করেছিল। অবৈধ ড্রেজার মেশিন চালানোর অভিযোগে ওই সময়ে বালু মহাল ইজারাদার সুজন মিয়া ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ভুমি খেকোদের অপতৎপরতা বন্ধে ইসলামপুর ইউনিয়নবাসীর পক্ষে পরিষদের কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। এ সংবাদ সম্মেলন করায় প্রভাবশালীদের প্ররোচনায় ভুমি খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ মামলার ২০নং আসামী জুয়েল মিয়া ১৪ জুলাই রাতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে ভুমি খেকো সুজন মিয়ার নিদেশে তাকে অপহরন করে নেন। সেখানে নিয়ে তাকে হাত পা বেধে মধ্যযুগী কায়দায় জুয়েল কে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় সুজন মিয়া। এ ঘটনায় জুয়েলের মা রুজিনা আক্তার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাঁপে এ ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয় উপজেলা প্রশাসন। হামলায় আহত অসহায় জুয়েল এখনও নিজ বাড়ীতে বিছানায় কাতরাচ্ছে। ভুমি খেকোরা বিগত ৩ মাস যাবৎ রাতের আধারে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রতিদিন ৬/৭ লাখ ঘনফুট বালু ও মাটি উত্তোলন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আতœসাৎ করছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ বালু খেকো চক্র অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দিনরাত অবৈধ ভাবে বোমা মেশিন ও ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করে দেদারসে বিক্রি করছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.মুহাম্মদ সুফি আলম সুহেল নৌকা যোগে রাজেন্দ্রপুর ও সৈয়াবাদ মৌজায় অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের দৃশ্যের ছবি এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে ফেরার পথে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা লাটিসোটা নিয়ে চেয়ারম্যানের উপর হামলার চেষ্টা করে। এসময় তার চিৎকারে নদীর তীরের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানকে গুম ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সোনাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন চলছে। ওরা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে সাধারন মানুষ ওই চক্রের বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রতিবাদ বা বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি মৌখিক ভাবে থানা পুলিশ ও একাধিকবার অবহিত করা হলেও কোন সুফল পায়নি। এব্যাপারে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এড.সুফি আলম সুহেল এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,বালু মহাল ইজাদার সুজন মিয়া আওয়ামীলীগের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বালু লুটপাট চালিয়েছে। তার এই সিন্ডিকেটে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের স্থানীয় কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। এলাকার ফসলি জমি, পরিবেশ ও এলাকার জীববৈচিত্র অবৈধ ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এব্যাপারে ছাতক বালু ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আব্দুস ছাত্তার ও সাধারন সম্পাদক মো.দিলোয়ার হোসেন এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন এখানকার পিয়াইন নদী বালু মহাল ছাড়াও একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধ বালু উত্তোলনে তান্ড চালাচ্ছে। এঘটনায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করলে ও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা। এব্যাপারে অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযুক্ত সুজন মিয়ার ছাতক শহরে তার ব্যবসায়িক অফিস থাকলেও সেটির দরজায় তালা ঝুলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তান মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া হাসান বলেন, পিয়াইন নদী বালু মহাল ইজারা সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ট্রাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে এসব অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো.আবু নাসের জানান, নদীগুলোতে একটি সিন্ডিকেট চত্রু অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন গিয়ে একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা ও বাল্কহেড আটক করেন।এবিষয়ে ইজারা নিয়মনীতি ভঙ্গ করায় এটি বাতিল করতে প্রায় একমাস পূর্বে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মো.ইলিয়াছ মিয়া জানান, ইজারা বাতিলের বিষয়ে এক সভায় আলোচনা করা হয়। ছাতকে এসিল্যান্ডও বাতিলের ব্যাপারে একটি লিখিত সুপারিশ করেছে। এবিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply