আনোয়ার হোসেন রনি
ছাতকে ভাবুক গীতিকবি হিজরত আহমদ। আউল বাউলদের সাধনার রাজধানী বলা হচ্ছে পুন্যভুমি সিলেট ও সুনামগঞ্জকে। এই মাটির সঙ্গে মক্কা মদিনার মাটির মিল রয়েছে বলে অনেকে জ্ঞানীরা মন্তব্য করে গেছেন।উপ মহাদেশে সুফি বাদ দর্শনে আধ্যাত্বিক জগতের বাদশা হচ্ছেন হজরত শাহজালাল (রঃ) তার অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে শ্রীহট্র গৌড় রাজ্যকে পরাজয় করে ইসলামের বিজয় নিশান উড়িয়েছেন সিলেটের মাটিতে। এ দেশে ইসলাম প্রচারের সঙ্গে সঙ্গেই সুফি সাধনার আবির্ভাব বিস্তার ঘটেছিল সিলেটের পুন্যভুমিতে। এ মাটির পরশ পেয়ে অসংখ্য পীর ফকির এ পুন্যভুমিতে মরমী গীতিকবি সাধকদের আবির্ভাব ঘটেছিল শ্রীহট্রে। তারা চারটি স্তরে পাশাপাশি ইসলামী কিতাব, গজল, নাত, হামদ মুর্শিদীগান রচনা করে গেছেন। তার পাশাপাশি শরিয়ত, তরিকত, মারেফাত, হকিকত। মরমী সাধকদের মধ্যে রয়েছেন মুলাইশাহ, সিয়ালিশাহ, সৈয়দ শানুর শাহ, বিশিষ্ট পুথিঁ সুফিসাধক খ্যাতমান ফকির আফজলশাহ ওরফে আরমান আলী, লালশাহ, ফয়েজউল্লাহ মুন্সি, দুর্বিনশাহ, আছদ উল্লাহ, সাবাল আলীশাহ, আরজ শাহ, আনাছ আলীশাহ, আব্বাস মুন্সি, আশুশাহ, হাসিম আলীশাহ, মনুশাহ, মানউল্লাহশাহ, মামনশাহ, আজিমশাহ, মরমীকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সুরুজ আলী, আব্দুল আজিজ, সাংবাদিক কবি অতীনদাশ, বশির উদ্দিন. এস. এম শরিয়ত উল্লাহ, মনির উদ্দিন নুরী, সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন (আমেরিকা), মতিউর রহমান, আশিক আলী ভান্ডারি ,কবি সৈয়দা রহিমা বেগম, গীতিকবি সালাহউদ্দিন ভান্ডারি, মনসুর আহমদ, শানুরশাহ, কবি মাহবুবুর রহমান লায়েক, নগরী বাউল আব্দুল করিম, লুৎফা বেগম লিলি, শাহীনা জালালি সহ নাম জানা অজানা অনেকেই এ ভুমিতে জন্মগ্রহন করেছেন। তাদের উত্তরসুরি হিসেবেই ভাবধারায় ইহকাল ও পরকালের ওপর অলিআউলিয়ার ও নবীর শানেদিন মজুর গীতিকবি হিজরত আহমদ ৪ শতাধিক বিভিন্ন ধারায় লোকসঙ্গীত, মুর্শিদী-মারফতি, জারি-সারি, পাঁচালী, পদাবলী, গজল, ভক্তিগীতি, ভজন-কীর্তন, কাওয়ালী প্রভৃতি গান রচনা করছেন । এসব সঙ্গীতের এক বিশাল ভান্ডারে সমৃদ্ধ আমাদের প্রাচীনতম ছাতকে গৌরবে ইতিহাস দেশ বিদেশে মাটিতে বহুদুর এগিয়ে নিয়েছেন। এখানে লোককবি, দার্শনিক কবি, দেহবাদী কবি, তাত্বিক কবি, সুফিবাদ কবিদের বিচরন ভুমি হিসাবে বহি-বিশ্বের মান চিত্রে ছাতক শিল্পনগরীর নাম পরিচিত রয়েছেন। এখানে রমরমী কবিদের সঙ্গে মা মাটির মিল রেখে একাকার হয়েচোখ আড়ালে সুফিবাদ বিষয়টির উপর বিশাল অমুল্য ভান্ডার সমদ্ধ করেছে এ প্রাচীনতম জনপদকে। নৌকা পাল তোলে নদীর মাঝে মাঝিরা আকুতি মধুর সুরে ভাটিয়ালি গানের আওয়াজ ভেসে আসতো সাধারন মানুষের হৃদয়ে। এ মুধর সুর কালে পরিবর্তে এখন এগুলো হারিয়ে গেছে। এখন আগের মতো নৌকার চলাচল একবারে বিলীন হয়েগেছে প্রাচীনতম নৌবন্দর ছাতক এ। তারই পরবর্তী উত্তরসূরী হয়ে কাজ করছেন গীতিকবি হিজরত আহমদ। তার রচিত গানে রয়েছে রূহ, জান, প্রাণ বা আত্মা। নতুন নতুন গান রচনা করে জীব জগতের সেরা মানুষ ভজনায়। রচনা করে যাচ্ছেন আত্মশক্তি আর আত্মতৃপ্তির বহুগান। যে গানে গানে তালাশ করলেও বীর্য রূপি আল্লাহকে, যে নিজেই পরম শক্তিপুরুষ হিসেবে বান্দার দেহের মধ্যেই বিরাজ করে আসছে। তার ব্যক্তিজীবনে দারিদ্রের পাড়ি দিয়ে এবং অর্থের অভাব সংসার গীতিকবি হিজরত আহমদ। সেখান থেকে অর্জন করেছে দেহ সাধনের চরম শিক্ষা। এ পোড় খাওয়া বাস্তবে অভিজ্ঞতার নানা বর্ণনা মেলে তার গানের মধ্যে। বর্তমানে ৫৪ বৎসরের দীর্ঘজীবন ভরেই নিয়েছেন তত্ত্বে সাধনা করে যাচ্ছেন। তার বাস্তব জীবনের নানাবিধ সমস্যা আর জটিলতা কাটিয়ে উঠেছে একজন আধ্যাত্মিক শক্তির সুফিসাধক যা কিনা তার সঙ্গীত সাধনায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে এবং একজন গীতিকবি হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহ যোগিয়েছেন প্রয়াত ছাতক প্রেসক্লাবের প্রতিষ্টাতা সভাপতিও মরমীকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ। তাকে আমরা যা কিছুই বলিনা কেন, তিনি একজন প্রান্তিক কৃষিজীবী ছিলেন, তার হালের চাষেই ফলে আউশ-আমনের ধান। কাঁদাজলের বুক চিরে এসে আমাদের চিনিয়ে দেয় শ্যামলীময়, দোদুল্যমান অনাবিল স্নিগ্ধ সকাল। তাদের উত্তরসুরি হিসেবে কাজ করছেন আত্নাজীবাত্না পরমাত্না অন্যকথায় অসীম অনন্তে সঙ্গে মেল বন্ধনের সেতুনির্মান করেছেন । তার গান গজল ও সুরের মাধ্যমে রচনা করে যাচ্ছেন একজন দিনমজুর গীতিকবি হিজরত আহমদ। তার অভাব অনটনের মাঝেই ৪শতাধিক গান রচনা করছেন। তার একটি গান উল্লেখ্য করেছিঃ
আকাশে বান্দিয়া নৌকা,
জমিনে ভাসাইলো।
আজব কারিগর,
ইচ্ছা মতো ভুবনে দৌড়াইলো।।
বিনাকাষ্টে বিনালোহায়,
পঞ্চজাত মিশাইলো।
মধ্যখানে বাইন্দা ছইয়া,
আসন মাইরাবইলো।
তার এ গানে কোন সুদুর অতীত অন্তর লোক থেকে যেনো সৃষ্টিও সষ্ট্রার মিলন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ফলে, না পাওয়ার দুঃখ বেদনায় মধ্যে একটা চরম আকুতি, এ আকুতি তার গানের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। তার একটি গানের মধ্যে রয়েছে। নিম্নে তার লেখা গানটি দেয়া হলো,
দিন গেলো ভাই হেলায় হেলায়.
রাত্রি গেলো বিশ্রামে।
ভক্তের বাতি জালাইলায় না,
আদম পুরের মোকামে।।
আদম পুর নিশানা করে,
বাজাও দমের বাঁশি আল্লাহ সুরে।
তাড়াইয়া দাও ছয় রিপুরে,
মুর্শিদেরই তালিমে।।
দশ জনার কর বাধ্য,
তোমার ইচ্ছাতে হইবে সাধ্য।
যোগাইয়া ত্বনের-ই খাদ্য,
যাও পঞ্চরঙ্গের বাদামে।।
হিজরত আহমদ কয় ভাবিয়া,
যাও দশের ঘরে বাতি দিয়া।
ত্বন বানাও মোহাম্মদিয়া,
জপো আল্লাহ দমে দমে।।
দিনমজুর গীতিকবি হিজরত আহমদ দেহের মধ্যে রিপুতে বাতি জ্বালাতে তার অন্তর বসিয়েছে আল্লাহ আল্লাহ সুর। দিনমজুর গীতিকবি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার প্রাচীনতম শিল্পনগরী উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের শিবনগর গ্রামে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে তিনি জন্ম গ্রহন করেছিলনে। তার পিতার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সরকার আমলে একজন শিক্ষক প্রয়াত ইরফান আলী। তার পুত্র ইলিয়াছ আলী ও মা ছিলেন আলেকজান বিবি একমাত্র পুত্র গীতিকবি হিজরত আহমদ। ১৯৬৮ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর মাসে জন্মগ্রহন করেন। তার এক বোন সামছুন নাহার। তার বাবা ১৯৬৯ সালে আনসার কমান্ডারের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তার বাবা ১৯৯৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও মা ২০০০ সালে ২৯ এপ্রিল তার না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সে ১৯৮৪ সালে দালান নির্মান শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করে অবশেষে জীবনের কঠোর সংগ্রামে যুদ্ধ করে একজন রাজমিস্ত্রী হিসাবে পরিচিত লাভ করেছেন। এখন তিনি ছাতক উপজেলার গ্রাম গঞ্জে পাড়া মহল্লায় একজন গীতিকার হিসেবে সবার কাছে পরিচিত প্রচার বিমুখ মানুষ। সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন গীতিকবি, গীতিকার, সুরকার হিসাবেই তার ব্যক্তিত্ব প্রচুর রয়েছে।
২০০০ সালে এপ্রিল মাসে সিলেটের সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের মীরপুর গ্রামে ছোয়াব আলীর প্রথম কন্যা রেজিয়া বেগমকে বিবাহ করেন। তার ২ পুত্র ৩ কন্যা। ৫ সন্তানের জনক গীতিকবি হিজরত আহমদ। তার দুঃখ কষ্টেজীবন যাপন ও অভাবে সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিসশিম খাচ্ছেন ভাবুক গীতিকবি হিজরত আহমদ।২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০৪টি লেখাগান নিয়ে “মা আমার সোহাগিন” নামে হিজরতগীতি প্রকাশিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট ফারজানা কম্পিউটর সেন্টার ডিজাইন কভার সহ মালিকানাধীন মাওলানা সাদিকুর রহমান ও সিলেটের মুদ্রন ঢাকা প্রিন্টিংপ্রেস সিলেট মুক্তিযোদ্ধা গলিজিন্দা বাজার থেকে প্রকাশনা করেছেন। এ বইয়ের ভুমিকা ছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে সাবেক প্রধান ও সিলেট সেরা বিদ্যাপিট এম.সি. কলেজ সিলেটের বাংলাবিভাগ প্রধান প্রফেসর. ডক্টর সফিউদ্দিন আহমদ। তার প্রতিটি গানে রয়েছে আল্লাহ, আখেরী নবী ও অলি আউলিয়া পীর মুর্শিদী শানে রচনা করেছেন তিনি। সে ১৯৯১ সালে রহস্যজনক ভাবে ভাব-জগতে প্রবেশ করেন। প্রথম সিলেটের প্রয়াত মরমী কবি সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন আহমদ রচিত একটিগান দেশ বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিক রেছে “মরিলে কান্দিসনা আমার দায়” এগানের লেখক প্রথমে তাকে এ ভাব জগতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বলেতার বইয়ে উল্লেখ্য করেছেন গীতিকবি হিজরত আহমদ। তার গানের প্রেম-ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃক্তি। আল্লাহ মানব সৃষ্টিকালেই তাতে প্রেম-প্রকৃতি। অন্যকোনও প্রাণীর মধ্যেপ্রেম-অনুরক্তির প্রকৃতি তেমন নেই। প্রেমে প্রকারভেদ থাকলেও আল্লাহকে ভালোবাসাই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেম। তার গানের মধ্যে রয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কথার বাইরেও আবেগ, অভিমান, নাপাওয়া, বিচ্ছেদ, কষ্ট, কিছুকান্না বা সুখের অব্যক্ত কথা মানুষের অন্তরে সর্বদা ঘুরপাক খেতে থাকে। আর তখনই মানুষ ভাবনার রাজ্যে প্রবেশ করে। সেই ভাবনার ফল স্বরূপ মানুষ তার অন্তরের অব্যক্ত অর্থও ভাবপূর্ণ কথাগুলো প্রকাশ করে গানে গানে, ছন্দে, গানের বাণীতে, যা ব্যক্তি নিজে প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না। যুগে যুগে মানুষের অন্তর নিঙ্ড়ানো বাণীতে রয়েছে কল্যাণের বার্তা, প্রেমের কথা, স্রষ্টা-সৃষ্টি, জন্ম-মৃত্যু ও বেদনার কথা। কাব্যগুণ সমৃদ্ধএসব বাণীর সঙ্গে সুর যুক্ত হয়ে প্রকাশ ঘটে সঙ্গীতের। তাই বলাহয়, বাণীর সাথে ভাবের ও সুরের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কোমল ও সূক্ষ্ম অনুভূতিজাত সঙ্গীতের বাণী, আবেগ, সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের বার্তা উপলব্ধিতে মানুষ আপ্লুত হয়, আনন্দে উদ্ভাসিত করে মানুষের হৃৎকমল। এটাই সঙ্গীতের ধর্ম। কালের বিবর্তনের সাথেসাথে সঙ্গীতের রচনা, ঢং, আঙ্গিক এবং পরিবেশনায় নতুন নতুন স্বাদ সংযোজিত হয়। প্রকারভেদে সঙ্গীত সবাই ভালোবাসে। কিন্তু সুর নিজের অজান্তেই ব্যথিতের চোখে অশ্রু হয়ে ঝড়ে শক্তিধর এই সুর আবার কখনো কখনো মানুষের হৃদয়ে আনন্দের ঝংকার ও তোলে। গীতিকবি তার মনে আগুনের আলোকচ্ছটা নেই, অথচ দহন করে অঙ্গার করে দেয় গীতিকবি হিজরতের দেহ ও মন। আর এই পোড়া মনের সব অভিব্যক্তিও মনের মানুষের সন্ধানে শাশ্বত প্রেমের প্রকাশ পায় বাউল, বৈষ্ণব, মরমিও সুফি সাধকদের চিন্তা চেতনার সমন্বয়ে রচিত আকুল করা গানেই। তার গানের বাণী, মর্মস্পর্শী আকুলতা, অন্তরের আবেদন, আহ্বান, হৃদয়স্পর্শী আবেগে, রূপে-রসে-মাধুর্যেও হৃদয়ের আকুলতা মিশ্রিত গানগুলো যখন একতারা-দোতারা-বেহালার সুরে বেজেও ঠেতখন মানুষের প্রাণেনিরন্তর অনুরণন তোলে, যা সব জাতির মর্ম মূলে সাড়া জাগিয়ে সর্বযুগের মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে অনায়াসে। তাইতো অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মরমী সাধকগণ গেয়ে ওঠে। তার গানের রয়েছেন সাধন পথের চারটি স্তরে সন্ধান মিলছে শরিয়ত, তরিকত, মারেফাত ও হকিকত।তার গানের সুরের মাধ্যমে প্রেম, বিচ্ছেদ কিংবা চাওয়া-পাওয়ার আর্তিব্যক্ত করেন প্রেম ময়ের নিকট। সঙ্গীতের ধর্ম মানুষের হৃদয়ে রস সঞ্চার করা, তাই সঙ্গীতের কোনো জাত নেই। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, ছোট-বড় সর্বপ্রকার মানুষের মনকে জাগ্রত করবে বলেই সঙ্গীত প্রেমিক মানুষের মনের খোরাক। মানুষের সুখ-দুঃখ, মনের সব চাওয়া-পাওয়া, হারানোর বেদনা, নাপাওয়ার আর্তনাদ উপমা, রূপক ও তত্ত্ব কথার আশ্রয়ে যেন সুরের বিনুনিতে গেঁথে রাখেন রচয়িতা। তার গানের গভীরে প্রবেশ করতে উচ্চশিক্ষিত আর জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন রয়েছেন ভাবুকের। মানব সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনে হতাশা-দুঃখ-বেদনা-মৃত্যু-হাসি-কান্না ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মানুষ সুখে হাসে, দুঃখে কাঁদে, এই দুঃখের কান্নার একটাসুর প্রতিটি মানুষের অন্তরে বেজে ওঠে নিভৃতে। সেই কান্না যখন অন্তর জর্জরিত করেতোলে তখন বিরহের আর্তিগুলো ক্রন্দন ধ্বনি হয়ে শব্দের মাধ্যমে মানুষের কণ্ঠেপ্রকাশ করে। সুরে প্রকাশিত এই কথাগুলোকেই আমরা গান বা সঙ্গীত বলি। বাঁশিতে ফুঁ না দিলে যেমন বাঁশি বাজেনা; তেমনি কোনো কিছুতে আঘাত ছাড়া শব্দের সৃষ্টি হয় না। যেমন অন্তরে আঘাত ছাড়া কবিত্ব শক্তির প্রকাশ পায় না। তেমনি দুঃখ ছাড়াও সুরের সৃষ্টি হয় না। কেননা মানুষ দেহে আঘাত পেলে উহ্শব্দ করে, আর অন্তরে আঘাত পেলে নীরবে কাঁদে। ব্যথিতের এই নীরব কান্না যখন শব্দে প্রকাশ পায় তখন এক ধরনের সুরের সৃষ্টিহয়। বাতাসের শনশন শব্দ, পাখির ডাক, প্রকৃতি থেকে পাওয়া শব্দ থেকেই মানুষ সুর খুঁজে পেয়েছিল এ কথাও সত্য। কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গীতের রচনা, ঢং, আঙ্গিক ও পরিবেশনায় নতুন নতুন স্বাদ সংযোজিত হয়। প্রকারভেদে সঙ্গীত সবাই ভালোবাসে। এমন একজন খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যে জীবনে মনের আনন্দে কিংবা দুঃখে গুনগুন করে মনের ভাব প্রকাশ করেন নি। সেটা হোক যেকোনও প্রকারের সঙ্গীত। মানুষের মনের ভাবকে সুর ও বাণীর মধ্যদিয়ে প্রকাশ করাই সঙ্গীতের ধর্ম। জীবনের সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনের মর্মবাণী মিশ্রিত কথাগুলো মানুষের সুমিষ্ট কণ্ঠে সুরের সাহায্যে বেরিয়ে আসে। গীতিকবি হিজরত আহমদ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের সিরাজপুর কাজিবাড়ি এলাকার মাওলানা আব্দুল হান্নান আলীয়া নকশবন্দিয়া তরিকা পীরের কাছে সে মুরিদ হয়েছেন। আলীয়া নকশবন্দিয়া তরিকাতে গীতিকবি হিজরত আহমদের বাপ দাদা এই সিলসিলাতে, আমিও আল্লাহর রহমতে হয়েছি হাজির। রওজা শরীফে শুয়ে আছেন মুশির্দ বাবা হয়রত ছাহেব ক্বিবলা আব্দুল রাজ্জাক তার দাদাপীর নিয়ে একটি গান রচনা করেছেন গীতিকবি নিজেই। নকশবন্দি কথাটির অর্থ দুটি ভাগে বিভক্ত একটি নকশা অপরটি বন্ধ। নকশা অর্থ অঙ্কন করা অর্থাৎ হৃদয়ে আল্লাহর ছবিও নাম অঙ্কিত করা। আর বন্ধ অর্থ বন্ধন। অর্থাৎ যুক্ত হওয়া আল্লাহর সঙ্গে। এজন্য নকশবন্দিয়া তরিকার শিষ্যরা অনুশীলন করে কুরআন এবং নবীজীর সুন্নাহ মেনে চলে। এর ফলে তাদের হৃদয়ে আল্লাহর প্রেম জাগ্রত থাকে। নকশবন্দিয়া তরিকা ঐতিহাসিকভাবে প্রথম শুরুহয় খলিফা আবুবকর সিদ্দিকী (রাঃ) এর দ্বারা। যিনি নবীজীর পরেই সলামের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ। তিনি নবীজীর পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি। তার উদ্দেশ্যে নবীজী বলেছেন ‘আমি যদি বলি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে তবে তা আবুবকর। যিনি আমার বন্ধুও ভাই।’ নকশবন্দিয়া তরিকা অন্যান্য তরিকার থেকে আলাদা। কারণ এই তরিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন নবীজীর ছয়জন উত্তরসূরি।
লেখক সাংবাদিক ও কবি আনোয়ার হোসেন রনি
সাধারন সম্পাদক,
ছাতক প্রেসক্লাব।
Leave a Reply