ছাতকে খেলা মাঠ রক্ষার
লড়াই গ্রামবাসীর
ছাতক প্রতিনিধি,
ছাতকে দোলারবাজার ইউপির জটি গ্রামে একটি খেলার মাঠ নিয়ে দু’পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থানে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গ্রামবাসী বর্তস্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং অন্যপক্ষ ক্রয় ও মৌরসী স্বত্বে মালিকানা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালে মালিকানা দাবি করে
আওয়ামীলীগের নেতাকমীরা জবর দখলের
চেষ্টা করেছিল ৮৩ নম্বর খতিয়ানের অংশীদার সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বশির আলীর উত্তরাধিকাররা। তাদের পক্ষে স্বত্ব দাবি করে গ্রামবাসীর ওপর ইনজাংশন জারি চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পর দীর্ঘদিন মাঠে খেলা বন্ধ থাকে রয়েছে।
অন্যদিকে গ্রামের পক্ষে বর্তস্বত্ব তথা খেলার মাঠ ঘোষণার দাবিতে আদালতে একটি মামলা করা হয়। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জজ আদালতে এ মামলার আপিল শুনানি চলছে। গ্রামবাসীর দাবি, জালিয়াতি করে মাঠের দলিল ও রেকর্ড করেছে একটি সিন্ডিকেট । সেখানে ওয়াক্ফ এস্টেটের জায়গাও রয়েছে, যা হস্তান্তর করা যায় না। এমনকি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে দলিল করা হয়।
গত সোমবার সকালে সরেজমিন ২ একর ৬ শতক জায়গার মাঠে বৃষ্টির মধ্যে গ্রামের তরুণদের ফুটবল খেলতে দেখা যায়। তারাও এটিকে মাঠ হিসেবেই দাবি করেন। স্থানীয় পালপুর মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কৃতি ফুটবলার তোফায়েল আহমদ আনা এ প্রতিনিধিকে বলেন পূর্বপুরুষ এবং নিজেও এ মাঠে খেলাধুলা করেছেন। নতুন প্রজন্মের জন্য মাঠটি উন্মুক্ত রাখার দাবি করেন তিনি। গ্রামবাসী প্রবীণ আফরোজ মিয়া, রইছ আলীসহ কয়েকজন জানান, মালিকানায় জালিয়াতি রয়েছে। খেলার মাঠ হিসেবে দেখতে চান।
উভয় পক্ষে কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, জটি মৌজার জেএল নম্বর ৩৯০ এবং ১১ নম্বর দাগের ৫ টি খতিয়ানে লায়েক পতিত শ্রেণির ২ একর ৬ শতক জায়গা নিয়ে মাঠের অবস্থান।
৫ খতিয়ানের মধ্যে ৭৭ নম্বরে ৪১ শতক জায়গার মালিক উপজেলার সিংচাপইড় গ্রামের নবাবুর রাজা চৌধুরী ওয়াক্ফ এস্টেট। এর মূল মোতাওয়াল্লি ছিলেন খান বাহাদুর গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। ১৯৮০ সাল থেকে মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করছেন নবাবুর রাজার নাতি ও সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর চৌধুরী।
তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ওয়াক্ফ এস্টেটের জায়গা হস্তান্তর করা যায় না। কিছু করতে হলে ওয়াক্ফ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। তারা কীভাবে এ জায়গার মালিকানা দাবি করছে, বুঝে আসছে না। জালিয়াতি করে কিছু করলে, সত্যটাও বের হয়ে আসবে।
৭৬ খতিয়ানে ৪২ শতক জায়গার এসএ মালিক ছিলেন একই গ্রামের জুলোয়ার রাজা চৌধুরী গং। নবাবুর রাজার ছেলে না থাকলেও জুলোয়ার রাজাকে সন্তান দেখিয়ে তাঁর উত্তরাধিকারের কাছ থেকে ১৯৮২-৮৩ সালের দিকে বিভিন্ন দলিল দেখানো হয়। জুলোয়ার রাজার নাতি রোকন রাজা চৌধুরী জানান, দলিল সম্পাদন করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু এতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
৮১ খতিয়ানের ৪১ শতকের এসএ মালিক ছিলেন শরিয়ত উল্লাহ গং, ৮৩ খতিয়ানে ৪১ শতকের এসএ মালিক আবদুর রহমান গং ও ৮০ খতিয়ানে ৪১ শতকের এসএ মালিক প্রহাদ আলী, কাছিম আলী, সাজিদ আলী, ইরশাদ আলী ও সিদ্দেক আলী। তাদের মধ্যে কাছিম আলীর মৃত্যুর ২০ বছর পর তাঁর কাছ থেকে একটি দলিল সম্পাদন দেখানো হয়েছে। অনেক উত্তরাধিকার আবার মাঠের মালিকানা দাবি করছেন না। এর মধ্যে একজন গ্রামের বাসিন্দা ও ৮০ খতিয়ানের অংশীদার নুরুল হক বলেন, এটি তো বহুকাল থেকেই খেলার মাঠ। মালিকানা থাকলেও আমরা তা চাই না। মাঠ হিসেবেই দেখতে চাই।
দলিল জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে মালিকানা দাবিদারদের পক্ষে আজিজ আহমদ দিপন বলেন, ৫ খতিয়ানের মধ্যে তিনটির অংশ তাদের মৌরসী। বাকি দুটি খতিয়ান খরিদাসূত্রে। মালিকানা থাকার পরও একটি পক্ষ মাঠ হিসেবে দাবি করছেন। অতীতে আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেয়। প্রতিপক্ষ আপিল করেছে। খেলাধুলায় বাধা দিচ্ছি না। আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি।###
Leave a Reply