সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জের ছাতকে একডজন সুন্দরী নারীকে বিয়ের নামে বহুরূপী এক প্রতারক,নারী লোভী লম্পট কন্ঠ শিল্পী আনোয়ার হোসেন গোলজারের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতারনা,ভুয়া স্ত্রী দিয়ে দেহ বানিজ্য,বাসা বাড়িতে ইয়াবা, গাজা মদের আসর বসিয়ে অধশতাধিক যুবকদের কাছ প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তার বৈধ স্ত্রী মাত্র একজন,ভুয়া স্ত্রী হচ্ছেন ১১জন। এসব অবৈধ স্ত্রী দিয়ে নানা শ্রেনীর পুরুষদের প্রতারনার ফাঁদে ফেলে অভিনব কায়দায় সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রথমে প্রেম ও মায়াজালে আটকিয়ে নগদ টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার লুট ও পরে মামলা ভয় দেখিয়ে দফা দফা টাকা হাতিয়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর রহস্য বেরিয়ে আসছে।তার ভুয়া দুই স্ত্রীসহ এ চত্রেুর ৬জনকে সিলেটের জালালাবাদ থানার তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাজুড়েই ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। জানা যায়,ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউপির মুক্তার পুর গ্রামের মৃত ময়না মিয়া চৌধুরী কন্যা পারভীন বেগম চৌধুরীকে ২০১৪ সালে ১০ নভেম্বর ৪ লাখ টাকা দেনমোহর ধাষ্য করে গোলজার পারভিনকে বিয়ে করেন। কন্ঠ শিল্পী বহুরুপি প্রতারক হচ্ছেন সিলেটের বিশ্বনাথ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউপির তালুুকজগত পাঠানগাওঁ গ্রামের মফিজ আলীর পুত্র কন্ঠ শিল্পী আনোয়ার হোসেন গোলজার (৩৫)। তার বৈধ স্ত্রী পারভিন বেগম স্বামী গোলজারকে নানা অপরাধ কমকান্ডের ঘটনায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার স্বামীর হাতে একাধিকবার মারপিট ও নিযাতনের শিকার হয়েছেন। তার ভুয়া স্ত্রী পুরুষখেকো নিলুফা বেগম (৪২) হলেন,ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরগাতি (ডিমকা) গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী নিলুফা বেগম (৪২)। অপর স্ত্রী হচ্ছেন ছাতক উপজেলার জাতুয়া গ্রামের আরশ আলীর মেয়ে সোনিয়া আক্তার মুন্নী (২০)। বিয়ের ৬ মাসের মধ্যে তার স্বামী তাকে অন্যপুরুষের দেহবানিজ্য করার প্রস্তাব করেছিল। তার প্রস্তাবের সে রাজি না হওয়ায় তার উপর নেমে আসতো অমানবিক নিযাতন।
পরে স্বামী আনোয়ার হোসেন গোলজার তার সুন্দরী পারভিন বেগম চৌধুরীকে বেড়ানোর কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার বিনিময় কুখ্যাত একজন মানবপাচারকারীদের হাতে
তোলে দেন এবং নগদ টাকার বিনিময় বিত্রিু করে দেয়া হয়। দীঘ ৫ বছর ধরেই পারভিন তার বাপের বাড়িতে না আসা গ্রামের লোকজনের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তার স্বামী সুন্দরী স্ত্রীকে রাতে সময না দিয়ে সারারাত নিলুফা বেগম নামে এক গৃহবধুর পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে তার সঙ্গে রাত্রি যাপন করতো বলে তার স্ত্রী অভিযোগ করেন। তার ভুয়া স্ত্রী নিলুফা বেগম (৪২)কে দিয়ে প্রেমের নামে প্রতারনার ফাদে ফেলে অধশতাধিক যুবকদের কাছ কৌশলে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেন।
এছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় হালিমা বেগম, সাহানা বেগম, আকলিমা আক্তার, মরিয়ম বেগম, রাজিয়া বেগম, লিবিয়া আক্তার, মিনা আক্তার, লাইলী আক্তারসহ কন্ঠ শিল্পী গোলজারের ১১জন ভুয়া স্ত্রী রয়েছেন বলে সুত্রে জানায়।
গত ২৬ অক্টোবর সিলেট নগরের শাবি গেটের শাহ সিকান্দর আবাসিক এলাকার ঈশান ভিলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের গত (২৭ অক্টোবর) বিকেলে সিলেটে মেট্রোপলিটন আদালত ২-এর ম্যাজিস্ট্রেট সুমন আহমদ ভুইয়া তাদের প্রত্যেকের ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ৩০ অক্টোবর তাদেরকে ফের আদালতে হাজির করা হয়।
গ্রেফতাকৃতরা হচ্ছেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া (৪৫), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মনিরগাতি (ডিমকা) গ্রামের আব্দুর রহমানের স্ত্রী বহুরুপি নিলুফা বেগম (৪২), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার লাউতা পূর্বপাড়া দক্ষিণ হাটির মৃত আজমত উল্লাহর পুত্র ফজলু মিয়া (৩৮), সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের লামাকাজি ইউপির তালুুকজগত পাঠানগাওঁয়ের মফিজ আলীর পুত্র আনোয়ার হোসেন গোলজার (৩০), সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগবেড় আকতাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদির ছাদির মিয়ার পুত্র সফর আলী (২২) ও সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাতুয়া গ্রামের আরশ আলীর মেয়ে সোনিয়া আক্তার মুন্নী (১৬)। আদালতসহ স্থানীয় সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের স্বামী পরিত্যক্ত এক সন্তানের জননী (২৫) সম্প্রতি দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজার ইউনিয়নের দরগাঁও গ্রামে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার ১৩ মাসের কন্যা সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে কামালবাজার ইউপির ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মাসুক মিয়ার কাছে যান। মাসুক মিয়া তাকে তাৎক্ষণিক জন্মসনদ না দিয়ে তার পারিবারিক ও অসহায়ত্বের বিষয়ে আলাপ করেন এবং ফোন নাম্বার রেখে পরবর্তীতে জন্মসনদ ও তাকে সেলাই মেশিনসহ একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
গত ২২ অক্টোবর ওই মহিলাকে ফোন করে তার অফিসে ডেকে নেন এবং কাজ দেয়ার কথা বলে একটি সিএনজি অটোরিক্সা করে দ্রুত তাকে সিলেট নগরের শাবি গেটের শাহ সিকান্দর আবাসিক এলাকার ঈশান ভিলায় নিয়ে যান ইউপি সদস্য মাসুক মিয়া।
সেখানে নিয়ে একটি কক্ষে আটক করে তিনি জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে বাসার ভাড়াটিয়া গোলজারের ভুয়া স্ত্রী নিলুফা বেগম, ফজলু মিয়া, আনোয়ার হোসেন, সফর আলী ও সোনিয়া আক্তার মুন্নির সহযোগিতায় ওই কক্ষে তাকে আটকে রেখে টাকার বিনিময়ে জনৈক আশিক মিয়া (৩৮) ও জনৈক আব্দুর রকিব (৩৭) নামের দুই ব্যক্তিকে দিয়ে ধর্ষণ করানো হয়। বিনিময়ে ওই দুইজন নগদ দুই হাজার টাকা বাসার ভাড়াটিয়া নিলুফা বেগমের কাছে দিয়ে চলে যায়।
গত ২৩ অক্টোবর রাতে ওই মহিলা কৌশলে বাসা থেকে শিশুটিকে নিয়ে কোনমতে পালিয়ে এসে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হয়। চিকিৎসা শেষে এসএমপি’র জালালাবাদ থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ সুরমার কামাল বাজার থেতে ইউপি মেম্বার মাসুক মিয়াকে এবং ঘটনাস্থল শাবি গেইটের ঈশান ভিলা থেকে অন্য ৫ জনকে আটক করে। এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার মাসুকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২৬ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এসএমপি’র জালালাবাদ থানায় মামলা (নং-২৮) দায়ের করেন ওই স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা।
মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত তাদের প্রত্যেকে ২দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে রোববার আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত আসামীদের রিমান্ডে নেওয়া হয়নি।
পুলিশ জানায়, এ চত্রেুর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতারনা ব্ল্যাকমেইল,গাজা মদ ইয়াবা সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিবস্ত্র সেই ছবি কখনো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে, কখনো নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে দফায় দফায় হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা পয়সা। গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রতারক চক্রের কাছে থাকায় অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরিবার ও সামাজিক মর্যাদার ভয়ে প্রতারকদের কাছে নিঃস্ব হয়েও মুখ খুলছেন না তারা।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহাবুর আলম মন্ডল জানান, একটি সিন্ডিকেট চত্রু দীঘদিন ধরে প্রতারনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেক আসামীর ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।##
Leave a Reply