আইন-আদালতউপজেলা

ছাতকে ইউপি সদস্যের বাড়িতে নারী আগন্তুকের আগমন এলাকায় তোলপাড়, চলছে জল্পনা-কল্পনা

ছাতকে ইউপি সদস্যের বাড়িতে নারী আগন্তুকের আগমন
এলাকায় তোলপাড়, চলছে জল্পনা-কল্পনা
প্রতিনিধি,
ছাতকে এক ইউপি সদস্যের বাড়িতে নারী আগন্তুকের আগমন নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। স্ত্রীর অধিকারের দাবীতে অবস্থান নেয়া ওই তরুনীর হাব-ভাব দেখে হতভম্ব হয়েছেন পরিবার ও এলাকার লোকজন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বয়সের আকাশ-পাতাল ব্যবধান হওয়ায় তরুনীর এ দাবীর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অভিজ্ঞ মহল। এ নিয়ে এলাকায় চলছে পক্ষে-বিপক্ষ আলোচনা-সমালোচনা। তবে ওই তরুনী ও ইউপি সদস্য স্ব-স্ব অবস্থানে এখনো অনড় রয়েছে। জানা যায়, ছাতক সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে টানা তিন বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য মকছুদুল হাসান আতর ইউনিয়নের বাউসা গ্রামের আছন আলীর পুত্র। জনপ্রিয় এ জনপ্রতিনিধি নিজের বিভিন্ন সমস্যার কারনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেননি। তিনি তার নিঃসংঘ জীবনে কাউকে আবদ্ধ না করে বাকী জীবনটাও কাটিয়ে দিতে চান। এভাবেই জনগনের ভালোবাসা নিয়ে জীবনের ৫৫টি বছর অতিবাহিত করেছেন তিনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর মধ্য রাতে ইউপি সদস্য মখসুদুল হাসান আতরের নিঃসংঘতা ভেঙ্গে দিতে তার বাড়িতে ২১ বছর বয়সী এক তরুনী আগন্তুকের আর্বিভাব ঘটে। মধ্যরাতে দরজায় নক করে ঘরে প্রবেশ করেই ওই তরুনী ইউপি সদস্য মখসুদুল হাসান আতরের স্ত্রীর দাবীতে অবস্থান নেয়। তার এ দাবী শুনে পরিবারের লোকজন হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ। ওই তরুনী একই ইউনিয়নের মল্লিককপুর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। সে আকিজ ফুড এন্ড বেভারিজ কারখানায় শ্রমিকের চাকুরীও করতো। তার বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সে চাকুরীচুত্য হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। বিয়ের দাবী করা ওই তরুনীর অসঙ্গতীপূর্ন কথাবার্তায় রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান। তরুনীর দাবী মতে, ৭ বছর আগে ইউপি সদস্যের সাথে তার পরিচয় ঘটে। এ পরিচয়ের সূত্র ধরেই ইউপি সদস্যের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক। একদিন দুপুরে শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে খাবাার দাওয়াতে নিয়ে খাবারের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে তাকে অজ্ঞান করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ধর্ষন করে মখসুদুল হাসান আতর। জ্ঞান ফিরে এলে এ ঘটনার জন্য তরুনীকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয় সে। এভাবেই প্রায় ৭ বছর ধরে চলছিল তাদের সম্পর্ক। কিন্তু বিয়ের দাবীতে চাপ সৃষ্টি করলে এ ইউপি সদস্য এতে পাশ কেটে যান। এক পর্যায়ে তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে ওই তরুনী ইউপি সদস্যের বাড়িতে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউপি সদস্য মখসুদুল হাসান আতর এ ব্যাপারে জানান, ওই তরুনীকে তিনি ভালোভাবে চিনেন না বা তার সাথে ঘনিষ্ট কোন পরিচয়ও নেই। ঘটনার রাতে সে বাড়িতেও ছিল না। তিনি আরো জানান, প্রায় দু’বছর আগে মির্জাপুর আনন্দস্কুলে যাতায়াত করার সময় এলাকার কয়েকটি যুবকের সাথে প্রেম ঘটিত কারনে ওই তরুনী পড়ে বিপাকে। স্থানীয় বাউসা বাজারে ওই ঘটনার বিচার করতে গিয়ে একাধিক যুবকের সাথে ওই তরুনীর প্রেমের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এ ধরনের ঘটনা ফের না ঘটানোর জন্য তরুনীকে শাসিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা ছাড়া আর কোনদিন ওই তরুনীর সাথে তার দেখা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষরা ওই তরুনীকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবাহার করতে চায়। তারা আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ওই তরুনী ব্যবহার করে তার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এলাকার লোকজন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বুঝতে পারছেন। ইউপি সদস্যের মা দুধবি বেগম এ ব্যাপারে জানান, মধ্য রাতে নারী কন্ঠের আওয়াজ শুনে দরজা খুলেন তিনি। তখন তিনি দেখতে পান অচেনা দু পুরুষ লোকের সাথে আসা এ মেয়েটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোন কিছু বোঝার আগেই এক প্রকার জোর পূর্বক মেয়েটিকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে সাথে আসা দু’পুরুষ চলে যায়। এর পর থেকেই ওই মেয়টি পরিবারের লোকজনের উপর মানষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। রনমঙ্গল গ্রামের সিরাজ আলী, আব্দুল মজিদ, বাউসা গ্রামের হাফিজ আবুল কালাম, আক্তার হোসেন, রাশিদ আলী জানান, মখসুদুল হাসান আতর এ এলাকার একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ও বাউসা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি। সে এ ধরনের কাজ করতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করেন না। এখানে অবশ্যই একটি ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে তারা মনে করেন। ইউপি সদস্য সুলতান মিয়া জানান, এ ধরনের কোন ঘটনা তার জানা নেই। দীর্ঘদিনের সহকর্মী এবং একসাথে চলাকালে তার মধ্যে এ ধরনের কোন আচরন পরিলক্ষিত হয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনাও হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। ইউপি সদস্য ইব্রাহিম আলী জানান, মখসুদুল হাসান আতর একজন জনপ্রিয় মানুষ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে ও পারিবারিকভাবেও তার সুনাম রয়েছে এলাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে এ মেয়েটিকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলে আসছে। বিষয়টি আইনীভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, ওই মেয়েটির মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্টা করা হয়েছে। পরিষদের ৪ জন সদস্যকে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা নিস্পত্তি করতে পারেনি। পরে এ ব্যাপারে কেউ আর যোগাযোগ করেনি। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল এ ব্যাপারে জানান, মেয়েটিকে মামলার মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে তা করেনি। তবে এ বিষয়ে আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!