আলোচিত খবরউপজেলারাজনীতি

ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি ও টিকিট টোকেনের দাবিতে বিক্ষোভ ভিসায় কঠিন শর্ত সৌদির

ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি ও টিকিট টোকেনের দাবিতে বিক্ষোভ ভিসায় কঠিন শর্ত সৌদির
হাজারও প্রবাসীর কাজে ফেরা অনিশ্চিত * নিয়োগকর্তা না চাইলে মেয়াদ বাড়াবে না সৌদি কর্তৃপক্ষ -পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ষ্টাফরিপোর্টার
ভিসায় কঠিন শর্ত সৌদির নবায়নের মাধ্যমে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধিতে সৌদি আরবের দেয়া কঠিন শর্তে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মী। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মেয়াদ শেষ হচ্ছে- এমন ভিসা নবায়নের সুযোগ দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা এমন কিছু শর্ত দিয়েছে, যা পূরণ করে একজন বাংলাদেশির পক্ষে নির্ধারিত সময়ে কাজে ফেরা প্রায় অসম্ভব। আবার অনেকের সব কিছু ঠিক থাকার পরও টিকিট পাচ্ছেন না। এতে তাদের যাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে যাদের মেয়াদ আজ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আছে, তাদের পাঠানোর জন্যও বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অথচ আজই তাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে এবং কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভ করেছেন সৌদি প্রবাসীরা। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, সে দেশের কফিল (নিয়োগকর্তা) না চাইলে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি করবে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। কারণ সেখানে ফিরে তো তাদের কফিলের সঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা (কফিল) চাচ্ছেন না, শুধু তারা যেতে পারবেন না, বাকিরা তো যাচ্ছেন। এদিকে আজ ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান হতে পারে। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোয় পাঁচটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরবে শ্রমিকের নিয়োগকর্তার (কফিল) আবেদন সংবলিত চিঠি যা সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত হতে হবে। সৌদি আরবের ইমিগ্রেশন অফিসের অনুমতিপত্রের কপি, রি-এন্ট্রি ভিসার মূল কপি, মেয়াদসহ কাজের অনুমতিপত্র বা ইকামার কপি, সৌদি আরব থেকে বের হওয়ার তারিখসহ পাসপোর্টের পাতার প্রিন্টের মূল কপি। এসব কাগজপত্র নিয়ে যাত্রীদের সৌদি দূতাবাস নির্ধারিত ট্রাভেল এজেন্সিতে যেতে হবে। সেখানে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর এজেন্সিগুলো তা সৌদি দূতাবাসে পাঠাবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সব কাগজপত্র সঠিক হলে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে সৌদি দূতাবাস। ভিসা পাওয়ার পর তখন টিকিটের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সে যোগাযোগ করতে হবে। টিকিট পাওয়ার পর সৌদি যাওয়ার আগে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে যাত্রীদের।এর মধ্যে ৪৮ ঘণ্টা আগে কোভিড পরীক্ষা, বিমান ভ্রমণের আগে সৌদি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত নির্দিষ্ট একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে যাত্রীদের। সৌদি আরবে বিমানবন্দরে নেমে বিমানবন্দর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে জমা দিতে হবে ফর্মটি।প্রত্যেক যাত্রীকে Tatman এবং Tawakkalna নামক দুটি অ্যাপ ডাউনলোড করে নিজেদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এজন্য সবাইকে সঙ্গে স্মার্টফোন রাখতে হবে। এসব নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে কোথাও ভুলত্রুটি হলে সৌদি আরবে নামার পর বিমানবন্দর অতিক্রম করার আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বড় অংকের টাকা জরিমানা গুনতে হবে। প্রবাসীসহ এ খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে কঠিন কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। কাজে ফেরার জন্য অপেক্ষমাণ প্রবাসীদের মধ্যে নানা পর্যায়ের লোক আছেন। তাদের সবার পক্ষে এসব নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করা খুবই কঠিন হবে বলে তারা মনে করেন। তারা বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা। এদিকে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে সৌদি অ্যাম্বাসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা এ কাজ করছে না। সৌদি সরকারের নির্দিষ্ট করে দেয়া ৩১টি ট্রাভেল এজেন্সিতে যোগাযোগ করতে হবে। এজেন্সিগুলোর কাছে গেলে তারা বলছে, এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা এখনও পায়নি। ফলে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক প্রবাসী বলছেন, তারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন।এত কাগজপত্র নিয়ে কখনই ছুটিতে দেশে আসেননি, এবারও আসেননি। অথচ এবারই এসে করোনা মহামারীর কারণে আটকা পড়েন। এখন ঢাকায় বসে কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এত কাগজপত্র জোগাড় করে সৌদি আরব যাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ একজন কফিলের অধীনে শত শত লোক কাজ করেন। কফিলও সবাইকে চেনেন না। সব কর্মীও কোনো দিন কফিলকে দেখেননি। তার ঠিকানাও কেউ নিয়ে আসেননি। এ অবস্থায় কফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিঠি আনা কঠিন। সৌদি আরব ইমিগ্রেশন অফিসের অনুমতিপত্রের কপি আনতে বলা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের কাগজপত্র নিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন। প্রতিটি শর্ত মেনে অধিকাংশ প্রবাসীর পক্ষে ভিসা নবায়ন সম্ভব নয়। তারা বলেন, এ ধরনের কাগজ যদি ঢাকা থেকেও সংগ্রহের কথা বলা হতো, তা-ও অনেকের জন্য কঠিন হতো। এককভাবে কোনো প্রবাসীর পক্ষে কঠিন শর্ত মেনে ভিসা নবায়ন করা সম্ভব হবে না।এজন্য তারা সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দাবি জানান সরকার যেন সৌদি সরকারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করে। এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাদের ভিসার মেয়াদ আছে, তাদেরও পাঠানোর জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এখন যাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ আগামী মাস পর্যন্ত আছে। তাদের রেখে, আগে এ মাসেই যাদের মেয়াদ শেষ হবে তাদের বিমান বা সৌদি এয়ারের টিকিট দেয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তারা। এদিকে উপায় না পেয়ে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ অটো বৃদ্ধি, টিকিট ও টোকেনের দাবিতে টানা ১২ দিন বিক্ষোভ করে আসছেন সৌদি প্রবাসীরা। মঙ্গলবারও সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা। সকাল ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের সামনের সড়কে ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি, সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিটের টোকেন দেয়ার দাবি সংবলিত ব্যানার নিয়ে সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে সার্ক ফোয়ারা চত্বর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। সৌদি প্রবাসীদের বিক্ষোভ মিছিলের ফলে সোনারগাঁও হোটেলের সামনের রাস্তা দিয়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় প্রবাসীকর্মীরা জানান, তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি বা বিমান টিকিট রি-কনফার্ম করার জন্য তারা এখনও টোকেনই পাননি।তাই ভিসার মেয়াদ অটো বাড়ানোর নিশ্চয়তা না পেলে তারা রাজপথ ছাড়বেন না। অবিলম্বে তাদের সৌদি ফেরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর সৌদি প্রবাসীরা কারওয়ান বাজার থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এখানেও তারা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এখান থেকে একটি দল যায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে।সাউদিয়া কর্তৃপক্ষের শিডিউল অনুযায়ী, যাদের টোকেন নম্বর ২৩০১ থেকে ২৭০০, শুধু এই ৪০০ জনকেই মঙ্গলবার টিকিট দেয়া হয়। তবে তিন হাজারের পরের সিরিয়ালের টোকেন নম্বরের প্রবাসীরাও সকাল থেকে সেখানে ভিড় করেন। টিকিট ইস্যু করলেও মঙ্গলবার নতুন করে আর কাউকে টোকেন দেয়া হয়নি। তাদের টানানো একটি নোটিশে বলা হয়েছে, ৪ অক্টোবরের আগে আর টোকেন দেয়া হচ্ছে না। বিক্ষোভে অংশ নেয়া এক প্রবাসী জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরে ঢাকায় বসে আছেন। তার ভিসার মেয়াদ শেষ। কীভাবে যাবেন, আদৌ যেতে পারবেন কিনা জানেন না। অপর একজন জানান, তিনি ঢাকায় এসে দুই আত্মীয়র বাড়িতে ছিলেন। এখন রাস্তায় না হয় মসজিদে রাত কাটাচ্ছেন। টিকিট-টোকেন কিছুই পাচ্ছেন না। এদিকে বিমান বাংলাদেশের টিকিট নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন ঘোষণা এসেছে। এখন থেকে ফিরতি টিকিট কেটে আসা যাত্রীরা শুধু মতিঝিল নয়, বিমান বাংলাদেশের যে কোনো কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে পারবেন। মতিঝিলে রিয়াদ, জেদ্দা ও দাম্মাম- এ তিন রুটের টিকিটই দেয়া হচ্ছে। দাম্মাম ও জেদ্দার ফ্লাইট ১ অক্টোবর ও রিয়াদের ফ্লাইট ২ অক্টোবর। বিমানের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস জানিয়েছেন, মদিনার যাত্রীরা জেদ্দার ফ্লাইটে যেতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!