প্রশাসন নিরব!
অবৈধপথে ভারতে শিং,মাগুর কৈই
মাছ পাচার! তবুও থামছেনা চোরাচালান
ছাতক প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধারে ভারতে পাচার হচ্ছে কোটি কোটি টাকার দেশীয় শিং মাগুর,কৈই ইলিশ মাছ। ট্রাকের ড্রামে ভর্তি করে নিয়মিত মাছ পাচার করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছেন নীরব। আর দেশীয় শিং মাগুর কৈই মাছ চোরাই পথে ভারতে পাচার হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখা দিয়েছে মাছের চরম সংকট। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযানের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তবে মাছ পাচারের বিষয়ে থানা পুলিশ বলছেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মদদেই ভারতে নিয়মিত পাচার হয়ে যাচ্ছে এসব দেশীয় মাছ।
সূত্রে জানাযায়, ছাতকের সড়ক ব্যবহার করে সুরমা নদীর সেতু পাড়ি দিয়ে দোয়ারাবাজার সীমান্তে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০-৫০টি সাদা পিকআপ যোগে ড্রামের মাধ্যমে শিং মাগুর কৈ মাছ অবৈধ ভাবে ভারতে পাচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলার খাল-বিল ও চাষ করা এসব মাছের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ভারতের স্থানীয় বাজারেও বাংলাদেশী শিং মাগুর কৈ ইলিশ মাছের রয়েছে চাহিদা। এসব দেশীয় মাছ ভারতে বিক্রি করে দামও ভালো পাওয়ায় পাচারের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক বাড়ছে। ভারতে পাচার হওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে শিং,মাগুর কৈই ও ইলিশ মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এলাকার বিক্রিতাদের অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয় সীমান্তবর্তী চোরাকারবারি একটি সিন্ডিকেট চক্র। ফলে উপজেলার গ্রামের স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে এসব মাছ পাওয়া গেলেও দাম চড়াও। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম, রুস্তুম আলী, আনোয়ার হোসেন, জিহান মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ওরা কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিং এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শিং,মাগুর কৈই মাছ ক্রয় করে প্রতি পিকআপে এক হাজার কেজি শিং মাছ ড্রামে ভর্তি করে ছাতকের সুরমা সেতু পাড়ি দিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারের কয়েকটি গলিতে নিয়ে শিং মাগুর কৈই মাছ হাউজে জমা রাখা হয়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতি রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সাদা পিকআপ ভ্যানের ভেতরে বড় ড্রামে করে শিং মাগুর কৈই বোঝাই করে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় এসব মাছ। পিকআপের একাধিক চালকরা বলেন, প্রতি পিকআপে এক হাজার থেকে ১১শ’ কেজি শিং মাগুর কৈই মাছ বাংলাবাজারের আড়তে মজুত করা হয়। এরপর এসব মাছগুলো এখান থেকে অবৈধ পথে পাচার করা হয় ভারতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই বিকেলে ও সন্ধ্যার পর সুবিদাজনক সময়ে বাংলাবাজার থেকে দেশীয় শিং মাছ পৌছানো হয় সীমান্তের বিভিন্ন জিরো পয়েন্টে। মাছ পাচারের কাজে সীমান্তের কাঠা তারের বেড়া সংলগ্ন এপার-ওপার দুই পারের শ্রমিকরা এসব মাছ পাচার কাজে সংযোগিতা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান, একটি পিকআপ ভর্তি মাছ ভারতে পাচারে কিছু সোর্সকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এরপরও প্রতি পিকআপ ভর্তি মাছে ১০/১২ হাজার টাকা মুনাফা হয়। স্থানীয় গ্রাম্য বাজারের হাটে শিং মাগুর কৈই মাছের পাইকারি দর প্রতি কেজি দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা। আর ভারতে পাচারের পর প্রতি কেজি শিং মাছ বিক্রি হয় আড়াই শত থেকে তিনশত রুপিতে। মাছ পাচারে সব খরচের পরও বেশ ভালো টাকা লাভ করা যায় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনসহ সকল রাস্তা ম্যানেজ করেই এসব মাছ ভারতে পাচার করা হচ্ছে। তবে যারা ভারতে মাছ পাচার করছেন, এবিষয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও মাছ পাচারের বিষয়টি তারা সকলেই অস্বীকার করেছেন। এব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল হাসান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন পিকআপ যোগে শিং মাছ ভারতে পাচারের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে মাছ পাচারের বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক বলেন, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে থানা পুলিশ সব-সময় তৎপর রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে ভারতে দেশীয় মাছ পাচারের বিষয়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।###
Leave a Reply