দোয়ারাবাজারে থামছে না আতঙ্ক:
একের পর এক লাশ উদ্ধারে জনমনে চরম উদ্বেগ
দোয়ারাবাজার উপজেলায় একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুরো এলাকায় নেমে এসেছে ভয় ও আতঙ্ক। সম্প্রতি অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার এবং তার আগের দিন সীমান্ত এলাকায় এক ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে—হঠাৎ করে কী শুরু হলো দোয়ারাবাজারে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ এখন প্রশাসনের জোরালো পদক্ষেপের অপেক্ষায়।
১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য) দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ঘিলাছড়া কবরস্থানের পাশ থেকে একটি অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা সকালে কবরস্থানের পাশে পড়ে থাকা লাশটি দেখতে পেয়ে দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে দোয়ারাবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রাথমিকভাবে লাশটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়দের ধারণা, নারীর বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লাশের শরীরে আঘাতের কিছু চিহ্ন দেখা গেছে। যদিও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। লাশটি কত সময় আগে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে, সেটিও তদন্তের বিষয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ও কবরস্থানের মতো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে লাশ পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।
এর ঠিক একদিন আগেই দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায়, ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে এক ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি সীমান্ত এলাকার একজন পরিচিত ব্যবসায়ী ছিলেন। লাশটি সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। বিষয়টি সীমান্ত সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বিজিবি ও পুলিশের যৌথ তৎপরতায় লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
পরপর দুই দিনে দুইটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দোয়ারাবাজারের সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই রাতের বেলা ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “আগে এমন ঘটনা খুব একটা শোনা যেত না। হঠাৎ করে একের পর এক লাশ পাওয়া যাচ্ছে—এটা খুবই ভয়ংকর।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নরসিংপুর ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এভাবে লাশ পাওয়া মানে আমাদের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরা দ্রুত দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছে। দোয়ারাবাজার থানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, উভয় ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অজ্ঞাত নারীর লাশের পরিচয় শনাক্তে আশপাশের থানায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো যাচাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় পাওয়া ব্যবসায়ীর মৃত্যুর বিষয়টিও আলাদাভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার সঙ্গে কোনো সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র জড়িত আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকাজুড়ে টহল জোরদার করা হয়েছে এবং সন্দেহভাজনদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা কাটছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, সীমান্ত এলাকা হওয়ায় চোরাচালান কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এসব ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে। আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন, কোনো অজানা চক্র এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, শুধু তদন্ত নয়—এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। রাত্রীকালীন টহল বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি নজরদারি এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করার দাবি উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রতিও সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। অপরিচিত কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে দ্রুত পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। অপ্রয়োজনে রাতে চলাচল পরিহার এবং পরিবার ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সব মিলিয়ে দোয়ারাবাজার এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। একের পর এক লাশ উদ্ধারের ঘটনা শুধু শোক নয়, এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে এই আতঙ্ক আরও গভীর হতে পারে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
Leave a Reply