ছাতকের মানুষের বন্ধু ও যোগ্য প্রশাসক মোঃ তরিকুল ইসলামের বিদায়ী সংবর্ধনা
আনোয়ার হোসেন রনি
আজ ৪ ডিসেম্বর ২৫ ছাতক শহরটি এক অনন্য ব্যক্তিত্বকে বিদায় জানালো—একজন প্রশাসক, যিনি শুধুমাত্র সরকারি দায়িত্ব পালন করেননি, বরং মানুষের প্রকৃত বন্ধু এবং মানবিক নেতৃত্বের অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তিনি হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ তরিকুল ইসলাম। তার বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে ছাতক শহরের রাস্তাঘাট, সরকারি অফিস এবং স্থানীয় জনগণ যেন একসাথে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে উপস্থিত হয়েছিল।
মোঃ তরিকুল ইসলাম ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক বছরে ও শহরে পরিবর্তনের ধারা শুরু করেন। তার কর্মজীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি শুধু প্রশাসক হিসেবেই নয়, মানুষদের বন্ধু এবং তাদের সমস্যার সমাধানকারীর ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, “মোঃ তরিকুল ভাই আমাদের কাছে প্রশাসক নয়, বরং অভিভাবক এবং বন্ধু। তিনি কখনো আমাদের কথা উপেক্ষা করেননি।”
নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ
তার দায়িত্ব গ্রহণের পর শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন দেখা গেছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ঠিকঠাক নর্দমা নির্মাণ, জরাজীর্ণ ব্রিজ পুনঃনির্মাণ এবং যানবাহনের সুবিধার্থে রাস্তার প্রশস্তিকরণ—সবকিছুই তার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে।
এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “আগে রাস্তা ও সড়কের বেহাল অবস্থা আমাদের ব্যবসার জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করত। কিন্তু মোঃ তরিকুল ভাইয়ের উদ্যোগে আজ আমরা সহজেই পণ্য পরিবহন করতে পারি।”
শুধু সড়ক নয়, তিনি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা, রোগীদের জন্য জরুরি ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা—সবই তার লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পনার অংশ ছিল।
একজন চিকিৎসক জানান, “উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহে যে স্থিতিশীলতা এসেছে, তার পেছনে তরিকুল ভাইয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রশাসক মোঃ তরিকুল ইসলাম তার প্রশাসনিক দায়িত্বের বাইরে মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানেও সাড়া দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কেউ যদি তাঁর অফিসে আসতো, তিনি প্রথমেই তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। এক বৃদ্ধ মহিলা বলেন, “আমার ছেলেকে সরকারি বৃত্তি পেতে সমস্যা হয়েছিল। অনেক প্রশাসকের কাছে গেলে নিরাশ হয়েছি, কিন্তু তরিকুল ভাই নিজে বিষয়টি দেখেছেন এবং দ্রুত সমাধান করেছেন।”
শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া, প্রতিবন্ধী বা দুস্থ পরিবারের জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া, স্থানীয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে উৎসাহ প্রদান—সবই তার মানবিক নেতৃত্বের পরিচায়ক। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, “ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন। আমরা তাঁর সহায়তায় স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পেরেছি।”
প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন আরও স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়ে উঠেছে। নিয়মিত জনসচেতনতামূলক সভা আয়োজন, জনগণের অভিযোগ দ্রুত সমাধান এবং প্রতিটি প্রকল্পে খরচ ও অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ—এসবের ফলে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের প্রতি আস্থা অর্জন করেছে। একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, “যে কোনো বিষয়ে তিনি সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই স্বচ্ছতা অন্য প্রশাসকদের জন্যও দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে।”
মোঃ তরিকুল ইসলাম শুধু প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি, তিনি শহরের মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমি সব সময় মনে রাখি, প্রশাসক হওয়া মানে শুধু অফিসের কাজ নয়, মানুষের জীবনের মান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা। ছাতকবাসীর সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সম্ভব হত না।”
অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রকল্প ও উদ্যোগ তার নেতৃত্বে শহরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। শহরের পুরোনো ও নোংরা নর্দমাগুলো সংস্কার, নদী-পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ, এবং বালু-পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ—এসব প্রকল্পে তার কড়া তদারকি ছিল।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, “উপজেলা প্রশাসন তার তত্ত্বাবধানে আমাদের জীবিকা সংরক্ষণে সহায়তা করেছে। আমরা আমাদের নদী ও পানি সম্পদ নিরাপদে ব্যবহার করতে পারছি।” শিক্ষা ক্ষেত্রে, তিনি স্থানীয় কলেজ ও স্কুলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ল্যাব, পাঠ্যক্রম, এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে তিনি সরাসরি সহায়তা দিয়েছেন। এজন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে “গুরু” ও “প্রেরণার উৎস” হিসেবে সম্মান জানিয়েছে।
বিদায়ের মুহূর্ত ও সংবর্ধনা আজ তার বিদায়ের মুহূর্তে শহরের মানুষ কাঁদতে বাধ্য হয়েছেন। বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শহরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ নাগরিকরা,সাংবাদিকবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেছেন।
বক্তারা একমত যে মোঃ তরিকুল ইসলাম শুধু একজন প্রশাসক নন, তিনি একজন প্রিয় মানুষ, পথপ্রদর্শক এবং বন্ধুত্বের প্রতীক। একজন কর্মকর্তা বলেন, “তার ন্যায়পরায়ণতা, দক্ষতা এবং মানবিক আচরণ আমাদের সকলের জন্য দৃষ্টান্ত। আমরা চাই, দেশের অন্য কোনো অঞ্চলেও তার মতো প্রশাসক থাকুক।”
বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সহকর্মীরা জানান, মোঃ তরিকুল ইসলামের প্রতিটি উদ্যোগ ছিল সমাজ কল্যাণমূলক। কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের চিন্তা ছাড়াই তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন একটি উদাহরণ স্বরূপ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে।
ছাতকবাসীর দৃষ্টিকোণ স্থানীয়রা তার বিদায়ের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন। তারা বলেন, “তার মতো একজন প্রশাসক আবারও ছাতকে আসবেন, তা জানা নেই, তবে তার নেতৃত্বের ছাপ শহরে দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।” শিক্ষার্থী থেকে বৃদ্ধ সবাই তার মানবিক আচরণ, স্বচ্ছতা এবং সেবামূলক মনোভাবকে স্মরণ করছেন।
ছাতকবাসী তার সুস্থতা, শান্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সাফল্যের জন্য দোয়া করেছেন। তারা আশাবাদী যে, তার মতো যোগ্য ও মানবিক ব্যক্তি দেশের যেকোনো প্রান্তে দায়িত্ব নিলেই সেখানকার মানুষ উন্নয়ন এবং কল্যাণ উপভোগ করতে পারবে।
সংক্ষেপে, মোঃ তরিকুল ইসলাম ছিলেন শুধু একজন প্রশাসক নয়—তিনি ছিলেন ছাতক শহরের হৃদয়ের অংশ, মানুষের বন্ধু এবং একজন মানবিক নেতা। তার অবদান, আন্তরিকতা এবং মানবিক আচরণ চিরকাল মানুষের মনে অমলিন হয়ে থাকবে। তার ন্যায়পরায়ণতা, সততা, স্বচ্ছতা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব প্রমাণ করে যে, যোগ্য নেতৃত্ব সমাজকে কতটা পরিবর্তিত করতে পারে। ছাতকবাসী তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকবেন, তার স্মৃতি চিরকাল তাদের হৃদয়ে অমলিন থাকবে।###
Leave a Reply