একই ফ্লাইটে তারেক রহমানের সঙ্গে দেশে ফিরছেন সুনামগঞ্জের আকিকুর রহমান

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির আগামী রাজনীতিতে ২৫ ডিসেম্বরকে ঘিরে যে বিশেষ উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি এখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য দিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর ঘিরে দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। দিনটিকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা–কর্মীদের মাঝে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি আলোচিত বিষয় হলো—সুনামগঞ্জের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী সৈয়দ আকিকুর রহমান একই ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন।

দলীয় সূত্র ও ঘনিষ্ঠ মহলের বরাত দিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সৈয়দ আকিকুর রহমান আগামি ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এমনিতেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একজনের দেশে ফেরা রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় বার্তা বহন করছে। তার উপরে একই ফ্লাইটে সুনামগঞ্জের রাজনীতির পরিচিত মুখ আকিকুর রহমানের উপস্থিতি নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতির পরিচিত মুখ
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন সৈয়দ আকিকুর রহমান। নব্বইয়ের দশকের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম সক্রিয় কর্মী। পরবর্তীতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দলীয় রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে তিনি একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেন। রাজনীতির পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। সুনামগঞ্জ শহরে হোটেল ওমর এবং গ্র্যান্ড সুনামগঞ্জ—এই দুটি আবাসিক হোটেলের স্বত্বাধিকারী হিসেবে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি এবং ব্যবসায়ী সমাজে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার কারণে তিনি ব্যবসায়ী মহলে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছেন।
২৫ ডিসেম্বরের প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাপ দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থান নেওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দলকে নতুন করে উজ্জীবিত করবে। বিশেষ করে চতুর্দশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল, সাংগঠনিক পুনর্গঠনের গতি, এবং আন্দোলন-সংগ্রামের ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে তারা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও বলছেন, বিএনপির নেতৃত্ব কাঠামোয় তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি দলটির রাজনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। সঙ্গত কারণে তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফেরা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন সঞ্চারণ সৈয়দ আকিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, দলের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্যে তার দেশে ফেরা সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক–দোয়ারাবাজার) আসনকে কেন্দ্র করে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকৌশলে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করতে পারে তার এই প্রত্যাবর্তন। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সুনামগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মো. ফরিদ মিয়া বলেন,
“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় সমন্বয়, সাংগঠনিক তৎপরতা এবং মাঠের পরিস্থিতিতে এ আগমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
তিনি আরও বলেন,সৈয়দ আকিকুর রহমান সব সময়ই নীরব কিন্তু কার্যকর রাজনীতির পক্ষে। তিনি দেশে ফিরছেন—এটি নিজ এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্যও এক ধরণের প্রেরণা হয়ে উঠেছে।”
জেলা–উপজেলায় প্রত্যাশার ঢেউ ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের সম্ভাব্য আগমন নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও দলের বিভিন্ন স্তরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ প্রস্তুতি সভা করছেন, কেউ আবার নেতার স্বাগত জানাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন—যদিও এসব প্রস্তুতি এখনো আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে যায়নি। শান্তিগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজারসহ সুনামগঞ্জ জেলায়ও বিএনপির মধ্যে উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে তরুণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর দলের শীর্ষ নেতার দেশে প্রত্যাবর্তন দেশব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রামকে নতুন রূপ দেবে।
সম্ভাবনার পথচলা ও চ্যালেঞ্জ সৈয়দ আকিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক পুনর্গঠন এবং স্থানীয় পর্যায়ের তৎপরতা বাড়াতে তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে তাকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যেতে পারে বলে দলীয় মহলে আলোচনা চলছে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনের অনিশ্চয়তা এবং জাতীয় রাজনীতির জটিল বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জও কম নয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন দ্রুত পরিবর্তনশীল, তেমনি বিএনপির আগামী পথচলাও নানা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে।
সবার কাছে দোয়া কামনা লন্ডন থেকে দেশে ফেরার আগে সৈয়দ আকিকুর রহমান তার শুভানুধ্যায়ীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন—দেশে ফিরে তিনি স্থানীয় মানুষের কল্যাণে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবেন।
এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় তিনি বলেন,দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরছি। দেশ-জাতির কল্যাণে ও উন্নয়নে রাজনীতিকে আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে নিতে চাই। নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে দোয়া চাই—যাতে নিরাপদে দেশে ফিরে আবারও আপনাদের সঙ্গে থাকতে পারি। সব মিলিয়ে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে একই ফ্লাইটে সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক পরিচিত মুখ সৈয়দ আকিকুর রহমানের দেশে ফেরা—সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারেক রহমানকে ঘিরে আগাম রাজনীতির যে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে, তার সঙ্গে আকিকুর রহমানের প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত গুরুত্ব বহন করছে। সুনামগঞ্জজুড়ে ইতোমধ্যে এ খবর জানাজানি হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা দেখা গেছে। আগামী দিনগুলোতে এ প্রত্যাবর্তন কী ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে—তা এখন রাজনৈতিক অঙ্গনের আগ্রহের বিষয়।