সুনামগঞ্জের মানব পাচার চক্রের খপ্পরে সর্বস্ব
হারাচ্ছেন দেড় শতাধিক তরুণ ও তরুনীরা প্রতারিত
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,
প্রবাসী অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ ছাতক দিরাই জামালগঞ্জ,দোয়ারাবাজার জগন্নাথপুর ও দক্ষিনসুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর হবিগঞ্জ থেকে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ বাহিনী। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক সহ দেশের তরুণদের ইউরোপ যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ চত্রেুর খপ্পরে সবস্ব হারাচ্ছেন দেড় শতাধিক তরুন ও তরুনীরা প্রতারিত হয়েছেন। এসব তরুণদের টার্গেট করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র।
বাংলাদেশ-ভারতে এ চক্রের সদস্যরা ভুয়া ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি দেখিয়ে তরুণদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে। প্রথমে দেশে কয়েক দফা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা। পরে তাদের পাঠানো হয় ভারত। তাদেরকে বলা হয়, সেখান থেকে তাদের ইউরোপ পাঠানো হবে। এরপর সেখানেও ধাপে ধাপে তাদের কাছ থেকে দফা দফা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে হোটেল রুমে জিম্মি করে রাখা হয়। টাকা না দিলে নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।সম্প্রতি ভারত থেকে কোনোমতে পালিয়ে দেশে ফিরেছেন একাধিক তরুণ ও তরুনীরা।
এদের মধ্যে দুজন মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। দুদেশের এ চক্রের দেয়া জাল ভিসা,ওয়ার্ক পারমিট, আর্থিক লেনদেন,চুক্তিপত্র ও অডিও কথোপকথনসহ বিভিন্ন তথ্য এ প্রতিনিধির কাছে এসেছে।
আবারো ও নতুন করে সুনামগঞ্জ দালাল চত্রুরা এনআইডি কার্ড এর রত্না বেগমের নামের ছবির উপর মাজেদা বেগমের ছবি বসিয়ে জাল করে ১২ বছরের নাবালিকা মেয়েকে ২৬ বছরে বানিয়ে সুনামগঞ্জ পাসপোট অফিস থেকে পাসপোট তৈরি করেছেন দালাল চত্রু সিন্ডিকেট রা।
কি করে এনআইডি কার্ড ছাড়াই নাবালিকা মেয়ে মাজেদা নামে পাসপোট হলো এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে জেলাজুড়েই। পাসপোট আবেদন তার ডেলিভারি শ্লিপ নম্বার ৪২৩৫ ০০০১০৫৬৩১। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষনশ্রী ইউপির হালুয়ার গাও গ্রামের নবী হোসেন মেয়ে ১২ বছরের মাজেদা বেগমকে ২৬ বছর দিয়ে একই উপজেলার গৌরারং ইউপির কামারটুক গ্রামে আব্দুল আওয়ালের মেয়ে রত্না বেগম এনআ্ইডি কার্ড জাল করে পাসপোট তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে দালাল চত্রেুর বিরুদ্ধে। এঘটনায় উপজেলার গৌরারং ইউপির কামারটুক গ্রামে আব্দুল আওয়ালের ছেলে মিজানুর রহমান বাদী হয়ে গত ৩১ জানুয়ারি মানব পাচার সিন্ডিকেট চত্রেুর মুলহোতা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামী করে দুজনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পিটিশন মামলা নম্বার দায়ের করেন। যার নং ৬ ও ২০২৩ ।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর মাসে সুনামগঞ্জ পাসপোট অফিসে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ মানব পাচার আলোচিত ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সুনামগঞ্জ একটি আন্তজাতিক দালাল চত্রু কতিপয় সরকারি কর্মকতা ও পাসপোট অফিসে দুনীতিবাজ কর্মকতা কর্মচারিদের যোগসাজে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব সত্যত
ঘটনার ভিন্নখাতে নিতে তারা কোমড় বেধে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সে উপজেলার গৌরারং ইউপির কামারটুক গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন। সুত্রে জানায় এ চত্রেুর সঙ্গে সুনামগঞ্জে সদর উপজেলার ডিএসবি গোয়েন্দা সংস্থার জনৈক কর্মকতা ও পাসপোট অফিসে দুনীতিবাজ কর্মকতা ও দালাল চত্রেুর বিরুদ্ধে নানা আথিক লেনদেনের ঘটনায় ১২ বছরের নাবালিকা মাজেদাকে ২৬ বছর বানিয়ে পাসপোট তৈরি করেন।
জানাযায়,সুনামগঞ্জ,ছাতক,দিরাই,জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার জগন্নাথপুর দক্ষিন সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজারের নৈনগাঁও গ্রামের তোফায়েল আহমেদের মা আম্বিয়া বেগম
এ প্রতিনিধির কাছে এভাবেই জানাচ্ছেন তাঁর কষ্টের কথাগুলো। ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দোয়ারাবাজারের মানব পাচারকারী সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে মাস দেড়েক আগে টাকা লেনদেন করেন ওই যুবক।
আম্বিয়া বেগম জানান, তাঁর ছেলেকে ৮ লাখ টাকায় ইতালি পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। লিবিয়া যাওয়ার পর তাঁর ছেলেকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে আরও ৪ লাখ টাকা চায় সাহাব উদ্দিনের ভাই লিবিয়ায় অবস্থানরত রাজা মিয়া। তার ছেলের কান্নাকাটিতে জমিজমা বিক্রি করে আরও ৪ লাখ টাকা দেয় তাঁরা। সাহাব উদ্দিনের ভাই রাজা মিয়া লিবিয়া থেকে এসব অপকর্ম করেন, এখানে তার হয়ে টাকা নেন সাহাব উদ্দিন। এ দুই ভাইয়ের খপ্পরে শুধু তোফায়েল নন, দোয়ারাবাজারের ইদনপুর গ্রামের মনির আলীর ছেলে মঞ্জু মিয়া, একই গ্রামের চান মিয়ার ছেলে মিনহাজ উদ্দিন,
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই গ্রামের সমুজ আলীর ছেলে মাহবুব হোসেনসহ কমপক্ষে ২৫ জন তাঁদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে গড়ে ১২ লাখ টাকা করে নিলে এ সংখ্যাটি দাঁড়ায় তিন কোটিরও বেশি। এর বাইরে জেলায় প্রতিটি উপজেলায় গড়ে উঠেছে এ মানব পাচার চক্রের জাল। ইকবাল হোসেন, সাহাব উদ্দিন ও রাজা মিয়া ছাড়াও জেলাজুড়ে মানব পাচারকারীদের দালাল বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ চত্রেুর ফাদে গ্রামের সহজ সরল যুবক ও যুবতীরা প্রতারিত হচ্ছেন। ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন নেওয়ার মিথ্যা লোভনীয় কথা বলে গ্রামের বিত্তশালী, মধ্যবিত্ত এমনকি দরিদ্র মানুষের জমিজমা বিক্রির লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। কাউকে কাউকে দুবাই হয়ে লিবিয়া নিয়ে বিপদগ্রস্ত করছে এই চক্র। কারও কারও প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এই চক্রের হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় কাজে নেমেছেন কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীও।
২০২২ সালে ১৬ জুন পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার জগন্নাথপুরের এক তরুণের মৃত্যু ঘটেছে।
২৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাঁর লাশ দেশে আসে। পরদিন জগন্নাথপুর থানা পুলিশ নিহতের সুরুতহাল রিপোর্ট তৈরি করে এবং ওই দিনই সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। পরে নিহত তরুণ এক ওয়ান ইসলামের বাবা তরিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩ অক্টোবর জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এই মামলার দুই আসামি আবুল মিয়া ও আসমা বেগমকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে
পুলিশ। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেলার দিরাই উপজেলার তিন যুবক ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে মারা যান। তাঁরা হলেন- উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের ফুল মিয়া সরদারের ছেলে জুনু সরদার (৩৪), নতুন কর্ণগাঁও গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমদ (২২) ও শাল্লা উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের আশুতোষ রায়ের ছেলে আকাশ রায় (২৫)। গত বছরের জানুয়ারি মাসে একইভাবে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে মৃত্যু ঘটে দিরাই পৌর এলাকার চণ্ডীপুর গ্রামের আব্দুস সবুর মাস্টারের ছেলে মাহবুবুল আলমের। এই উপজেলার মানব পাচারকারী টুক দিরাই গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে এনামুলের মাধ্যমে ইতালি যেতে দেশ ছেড়েছিলেন তাঁরা।
গত বছরের ২৫ জানুয়ারি জামালগঞ্জের ভীমখালীর নরুল আমিন তালুকদারের ছেলে সাজ্জাদুর রহমান সুজন লিবিয়া থেকে ট্রলারে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে মারা যান। নিহত সাজ্জাদুরের চাচাতো ভাই ভীমখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন জানান, শান্তিগঞ্জের লালুখালীর মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেল আহমদের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেছিলেন তার চাচা নুরুল আমিন তালুকদার। দোয়ারার সাহাব উদ্দিনের তার মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় প্রথমে পরিচয় না দিয়ে ইতালি যেতে আগ্রহের কথা জানিয়ে কী করতে হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাইরেক্ট যেতে ১৭ লাখ লাগবে। সময় চার মাস দিতে হবে।’ দুবাই-লিবিয়া হয়ে পাঠানো যাবে জানিয়ে বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আটকে যায়। তবে যারা আটকা পড়েছিল, তাদের সবাইকে ছুটানো হয়েছে।’ এক পর্যায়ে সংবাদকমী পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘আমি যাহা কথা বলেছি,দয়া করে এসব কথা পত্রিকায় দেবেন না ।’ তিনি আরও জানান, নৈনগাঁওয়ের তোফায়েলের বিষয়টি গত বছরের ১৭ অক্টোবর পর বসে মীমাংসা করা হবে। আটকে পড়া অন্যদেরও ইউরোপে ঢোকার ব্যবস্থা হবে বলে জানান তিনি। এদের কবলে পড়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা দেড় শতাধিক তরুণ ও তরুনীরাএ চক্রের কাছে সর্বস্ব হারিয়ে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন।
দুদেশে সক্রিয় মানব পাচার আন্তর্জাতিক এ চক্রের সদস্যরা হলো- কলকাতার বারাসত এলাকার সজিব (হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বর +৯১৮৬৯৭৭৬৩৮১৭), তার সহযোগী পোল্যান্ডের নাগরিক অভি (হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বর +৪৮৭৯৭০৬৩৫৩৩), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার গাজীনগর গ্রামের একরাম উল্লাহর ছেলে মাসুক আহমেদ মাসুম ওরফে শাকিল, দোয়ারাবাজার সাহাব উদ্দিন,
সিলেটের গোলাপগঞ্জের হাজিলপুর গ্রামের মঈনুল হকের ছেলে মাসুম আহমেদ ওরফে হাজী মাসুম ওরফে রেদওয়ান, কেএমসি হলিডেইজর ম্যানেজার মো. হাসান, জালালাবাদ থানার সোনাতুলা এলাকার নাজিরের গাওয়ের মৃত আবদুল আলিমের ছেলে শহিদুল ইসলাম শাহিন,মোগলাবাজার থানার দক্ষিণ সুলতানপুরের মানিক মিয়ার ছেলে আশিকুর রহমান,সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউপির কামারটুক গ্রামের লাল মিয়া ছেলে ইকবাল হোসেন সহ দেড় শতাধিক মানব পাচার বিস্তার সিন্ডিকেট জাল ছড়িয়ে পড়েছেন।
এব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবু সাঈদ জানান, মানব পাচারের ঘটনায় জগন্নাথপুরের দু’জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে বলেন,মানব পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ,কঠোর অ্যাকশনে যাবে। তবে জেলাজুড়ে পাচারকারীদের তালিকা তৈরি কাজ চলছে।###
Leave a Reply