ছাতকে স্বামী-ভাসুরসহ ৩জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে নিযাতিত গৃহবধূর মামলা
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জের ছাতকে স্বামী ও ভাসুরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে এক গৃহবধু নাজমিন নাহার আছিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জেলাজুড়েই চলছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে।
সে উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের ছত্রিশ কালীপুর গ্রামের রইছ আলীর কন্যা বাদী গত ২ অক্টোবর পর্নোগ্রাফির অভিযোগ এনে আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জে সিআর মোকদ্দমা (নং-৪১৪/২০২২ইং) দায়ের করা হয়েছে।
আদালত কর্তৃক ৬৬৫ নং স্মারক মূলে তার অভিযোগটি আদালত আমলে নিয়ে ছাতক থানাকে এফআইআর করার জন্য আদেশ দেয়।
এ আদেশ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ অক্টোবর পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন ২০১২ এর ৮ এর (১) (২) ও (৩) ধারায় ছাতক থানায় একটি মামলা (যার নং-১৩) রুজু করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন, ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের আবদুর রউফের পুত্র সেলিম আহমদ (৩৬), তার বড় ভাই ছাতক উপজেলা যুবলীগ নেতা রাফি আহমদ রিংকু (৩৮) ও একই গ্রামের মছব্বির আলীর পুত্র আলী আকবর (৩০) কে আসামী করে সুন্দরী গৃহবধু এ মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর আগে ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের আবদুর রউফের পুত্র সেলিম আহমদের সাথে নাজমিন নাহার আছিয়ার বিয়ে হয়। বিবাহিত জীবনে পারিবারিক কলহের সুযোগে স্বামী সেলিম আহমদকে ভাসুর রাফি আহমদ রিংকু নানা প্রলোভন প্ররোচনা দিয়ে তার সাংসারিক জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। এসব ঘটনার জের ধরে সুন্দরী গৃহবধূর ওপর ভাসুরের কু-নজর পড়ে। পরে তার ভাসুর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে
তাকে একা পেয়ে জোরপুবক ধর্ষনের চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে নানা অত্যাচার নির্যাতন করে ভাসুর ছাত্রলীগ নেতা রাফি আহমদ রিংকু।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অবিবাহিত ভাসুরের বিরুদ্ধে সুন্দরী ওই গৃহবধূ একটি মামলা (নং-২৭১/২০২২) দায়ের করেন। এ মামলায় তার ভাসুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছেন সুনামগঞ্জ আদালত। তার দায়েরকৃত মামলা তুলে এনে বিষয়টি আপোষ করার জন্য তার স্বামী স্ত্রীকে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। কিন্ত তার স্বামী কথায় স্ত্রী (আছিয়া) রাজি হয়নি।এদিকে ভাসুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূর স্বামী তার নিজের আইডিতে স্ত্রীর ছবি এডিট করে অন্য একজনের সাথে নগ্ন অবস্থায় একটি ছবি পোষ্ট করা হয়। ওই পোষ্টটি গৃহবধূর আত্মীয় একাধিক আইডিতে ট্যাগ করেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার ভাসুর ছাত্রলীগ নেতা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে একই পোষ্ট গৃহবধূর ভাইসহ অন্যান্যদের মোবাইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুন্দরী গৃহবধূর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এ নগ্ন ছবি পাঠান অপর আসামি আকবর আলী ও।
সুন্দরী গৃহবধুর এই ছবিটি আসামী আকবর আলী তার ফেসবুকেও শেয়ার করে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দেয়।
নিযাতিত মামলার বাদী নাজমিন নাহার আছিয়া এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,
তার ভাসুর ছাত্রলীগের নেতার রাফি আহমদ রিংকুর বিরুদ্ধে দায়েরি ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তার গ্রেফতারী পরোয়ানাকৃত আসামী এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তার এ মামলা আপোষ না করায় ছবি এডিট করে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে সুন্দরী গৃহবধুকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এক কন্যা সন্তান নিয়ে লোক লজ্জার ভয়ে তার ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। তার স্বামী-ভাসুরসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন নিযাতিত গৃহবধু।
এব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা রাফি আহমদ রিংকু ব্যবহারকৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকার তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, ছাতক থানাধীন জাহিদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব- ইন্সপেক্টর পলাশ চন্দ্র দাশ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন এ মামলার প্রধান আসামি বাদীনির স্বামী সেলিম আহমদ ও ৩ নম্বর আসামি আলী আকবর প্রবাসে রয়েছেন। তার মামলার ২ নম্বর আসামি রাফি আহমদ রিংকু দেশে আছেন। সে এখন আত্নগোপনে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।##